ক্যান্সার প্রতিরোধ – প্রয়োজন সচেতনতা এবং সম্মিলিত উদ্যোগ

ক্যান্সার প্রতিরোধ – প্রয়োজন সচেতনতা এবং সম্মিলিত উদ্যোগ 

277 বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশে সহজলভ্য কিছু ক্যান্সার প্রতিষেধকের জেনেরিক ও বাণিজ্যিক নাম

১. সাইক্লোফসফামাইড (Cyclophosphamide)

বাণিজ্যিক নাম উৎপাদনকারী ওষুধ কোম্পানী 
সাইক্লোমাইড (Cyclomide) টেকনো ড্রাগস লিমিটেড
সাইক্লোটক্স (Cyclotox)বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
সাইফস (Cyphos) ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল 
নিওক্লামাইড (Neoclomide)হেলথকেয়ার ফার্মেসিউটিক্যালস লিমিটেড
ইন্ডোক্সান (Endoxan)সাইনোভিয়া ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড 

২. সিসপ্লাটিন (Cisplastin) 

বাণিজ্যিক নাম উৎপাদনকারী ওষুধ কোম্পানী 
প্লাটিনেক্স (Platinex) বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
সেজালিন (Cesalin)টেকনো ড্রাগস লিমিটেড
নিওপ্লাট (Neoplat) ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল 
সিসপ্লাট (Cisplat)হেলথকেয়ার ফার্মেসিউটিক্যালস লিমিটেড
সিসপ্লাটিন হেক্সাল (Cisplatin Hexal)সানডোজ (নোভারটিস)

৩. ৫- ফ্লুরোইউরাসিল (5- Fluorouracil) 

বাণিজ্যিক নাম উৎপাদনকারী ওষুধ কোম্পানী 
ফ্লুরোক্সান (Fluroxan) বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
৫- ফ্লুরিল (5- Fluril)টেকনো ড্রাগস লিমিটেড
ফ্লুরাসিল (Fluracil) ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল 
ড্রুসিল (Drucil)হেলথকেয়ার ফার্মেসিউটিক্যালস লিমিটেড
ফ্লুরোটর (Flurotor)এস কে এফ  ফার্মেসিউটিক্যালস লিমিটেড

৪. কার্বোপ্লাটিন (Carboplatin)

বাণিজ্যিক নাম উৎপাদনকারী ওষুধ কোম্পানী 
কার্বোপ্লাট (Carboplat) বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
কার্বোটিন (Carbotin)টেকনো ড্রাগস লিমিটেড
কারপ্লাটিন (Carplatin) ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল 
সাইটোকার্ব (Cytocarb)হেলথকেয়ার ফার্মেসিউটিক্যালস লিমিটেড
কার্বোটোর (Carbotor)এস কে এফ  ফার্মেসিউটিক্যালস লিমিটেড

৫. ব্লেওমাইসিন (Bleomycin)

বাণিজ্যিক নাম উৎপাদনকারী ওষুধ কোম্পানী 
ব্লেওনিক্স (Bleonix)বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড 

৬. ডোসেটাক্সেল (Docetaxel)

বাণিজ্যিক নাম উৎপাদনকারী ওষুধ কোম্পানী 
ডোসেক্সান (Docexan) বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
টাক্সেডল (Taxedol)বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
ডোসেট্যাক্স (Docetax) টেকনো ড্রাগস লিমিটেড
ডোসেফ্রেজ (Docefrez)হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
ডোসেটোর (Docetor)এস কে এফ  ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

৭. ডক্সোরুবিসিন (Doxorubicin)

বাণিজ্যিক নাম উৎপাদনকারী ওষুধ কোম্পানী 
জরুবিন (Xorubin) বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
ডক্সোরুব (Doxorub)টেকনো ড্রাগস লিমিটেড
ডবিক্সিন (Dobixin) ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল 
এড্রিবিন (Adribin)হেলথকেয়ার ফার্মেসিউটিক্যালস লিমিটেড
ডক্সোটোর (Doxotor)এস কে এফ  ফার্মেসিউটিক্যালস লিমিটেড

৮. প্যাক্লিট্যাক্সেল (Paclitaxel)

বাণিজ্যিক নাম উৎপাদনকারী ওষুধ কোম্পানী 
জেলপ্যাক (Xelpac) বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
প্যাক্লি (Pacli)বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
প্যাক্লিটেক্স (Paclitex) টেকনো ড্রাগস লিমিটেড
প্যাক্সেল (Paxel)হেলথকেয়ার ফার্মেসিউটিক্যালস লিমিটেড
প্যাক্লিটোর (Paclitor)এস কে এফ  ফার্মেসিউটিক্যালস লিমিটেড

৯. মেথোট্রেক্সেট (Methotrexate) 

বাণিজ্যিক নাম উৎপাদনকারী ওষুধ কোম্পানী 
ট্রেক্সোনেট (Trexonate) বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
মেটোর‍্যাক্স (Metorax)রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
মেথ (Meth) ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল 
মেথোক্স (Methox)পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
মেথোট্র্যাক্স (Methotrax)ডেল্টা  ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড

১০. জেমিসিটাবাইন (Gemcitabine)

বাণিজ্যিক নাম উৎপাদনকারী ওষুধ কোম্পানী 
জেমোক্সেন (Gemoxen) বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
জেমসেটিন (Gemcetin)টেকনো ড্রাগস লিমিটেড
সাইটোজেম (Cytogem) ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল 
জেমবাইন (Gembine)হেলথকেয়ার ফার্মেসিউটিক্যালস লিমিটেড
জেমটোর (Gemtor)এস কে এফ  ফার্মেসিউটিক্যালস লিমিটেড

প্রথম পর্যায়ের ক্যান্সার প্রতিরোধক  ওষুধ

সাধারণত কেমোথেরাপির মাধ্যমে কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধী ওষুধ একসাথে মিশিয়ে মানবশরীরে প্রবেশ করানো হয়। এমন দুটি বহুল প্রচলিত ও কার্যকর ওষুধ হলোঃ

১. ডক্সোরুবিসিন 

২. সাইক্লোফসফামাইড

ডক্সোরুবিসিনঃ 

ডোজেজঃ পরিণত বয়স্ক ও শিশুদের জন্যঃ 

ইঞ্জেকশন তরলঃ ২ মিগ্রা/ মিলি

ইঞ্জেকশন পাউডারঃ ১০ মিগ্রা, ৫০ মিগ্রা 

ক্যান্সার আক্রান্ত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে, 

  • ৩০-৭৫ মিগ্রা/ মিআইভি প্রতি ২১ দিন পর পর 
  • ২০-৩০ মিগ্রা/ মি/ ডোজ প্রতি সপ্তাহে 
  • ৬০-৯০ মিগ্রা/ মি আইভি ৯৬ ঘন্টার বেশি সময় ধরে প্রতি ৩-৪ সপ্তাহ পর পর

ক্যান্সার আক্রান্ত প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে, 

  • ৬০-৭৫ মিগ্রা/ মিআইভি প্রতি ২১ দিন পর পর 
  • ৬০ মিগ্রা/ মিআইভি প্রতি ১৪ দিন পর পর 
  • ৪০-৬০ মিগ্রা/ মিআইভি প্রতি ২১-২৮ দিন পর পর 
  • ২০ মিগ্রা/ মি / ডোজ প্রতি সপ্তাহে 

বৃক্ক রোগের ক্ষেত্রে, ডোজ সমন্বয় জরুরি নয়।

ক্রিয়াকৌশলঃ ডক্সোরুবিসিন এন্টিনিওপ্লাস্টিক শ্রেণীভুক্ত একটি ওষুধ। এটি সাধারণত দুইভাবে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে।

১. ডিএনএ এর স্বাভাবিক বেস জোড়ের মাঝে নিজেকে আন্তঃসংযোগ করে ডিএনএ স্ট্র‍্যান্ডকে ভেঙে দেয় এবং ডিএনএ ও আরএনএ সংশ্লেষণে বাঁধা দেয়। ডক্সোরুবিসিন ‘টপোআইসোমারেজ ২’ নামক এনজাইম তৈরীতে বাঁধা দেয়, ফলে ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ওই ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ মারা যায়। 

২. ডক্সোরুবিসিন জারিত হয়ে সেমিকুইনোন নামক একটি অস্থায়ী বিপাক যৌগ তৈরী করে যা পুনরায় ডক্সোরুবিসিন এ পরিণত হয়ে প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন মুক্ত মূলক তৈরী করে যা লিপিড পারঅক্সিডেশন, ঝিল্লীর ক্ষতি, ডিএনএর ক্ষতি, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে। 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ 

  • চুল পড়া ও চুলের পুরুত্ব কমে যাওয়া
  • বমি 
  • ঠোঁট ও মুখে ঘা
  • হাতের তালু, পায়ের তালু কালো হয়ে যাওয়া 
  • ডায়রিয়া
  • কাশি 
  • জ্বর 
  • অনিয়মিত হৃদস্পন্দন 
  • অস্থিসন্ধি ব্যথা 
  • মেরুদণ্ডে ব্যথা 
  • প্রস্রাবকালীন যন্ত্রণা 
  • শ্বাস প্রশ্বাস ছোট হওয়া
  • পা ফোলা
  • পেট ব্যথা
  • কালো মল 
  • প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া 
  • ত্বকে লালচে দাগ পড়া 

সতর্কতাঃ 

ডক্সোরুবিসিন ব্যবহারে অবশ্যই কিছু ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে৷ 

  • চিকিৎসার শুরুতে চিকিৎসক বা ফার্মাসিস্ট অবশ্যই রোগীর সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এই ওষুধ ব্যবহারের উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনা করবেন এবং উপকারিতা বেশি হলে এই ওষুধ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিবেন।
  • রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নির্ণয় করতে হবে।
  • গর্ভাবস্থায় ডক্সোরুবিসিন ব্যবহার করলে তা পেটের বাচ্চার ক্ষতি করতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। 
  • এই ওষুধের থেরাপী চলাকালীন এবং শেষ ডোজের ৬ মাস পর্যন্ত কার্যকর জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে গর্ভধারণ হতে বিরত থাকা উচিত।
  • যেহেতু এই ওষুধ হৃদপিন্ডের ক্ষতি করতে পারে, তাই এ থেরাপীর পরে হৃদপিন্ডের যেকোনো সমস্যা চিকিৎসককে অবহিত করতে হবে। 
  • ওষুধ প্রয়োগের সময় কোনোভাবেই যেন শিরা থেকে না বেরিয়ে পড়ে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। 
  • এই ওষুধের ব্যবহার চলাকালীন অন্য কোনো ভ্যাক্সিন গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • ডক্সোরুবিসিন শ্বেত রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকার পরিমাণ কমিয়ে দেয় বলে ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য সংক্রমণের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। 
  • ব্যবহৃত অন্যান্য ওষুধের সাথে এই ওষুধের মিথস্ক্রিয়া বিবেচনা করতে হবে। 

আমি মিরাজ আল ফয়সাল। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী প্রফেশনাল মাস্টার্স কোর্সে অধ্যয়নরত আছি। এ বিষয়ে পড়াশোনাকালীন সময় থেকেই বিভিন্ন রোগ, ওষুধের কার্যকারিতা, স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন লেখনী, গবেষণাপত্র, স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক টিপস ইত্যাদি পড়ার ও লেখার আগ্রহ জন্মায়। একজন এ গ্রেড ফার্মাসিস্ট হিসেবে আমি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরীতে এবং স্বাস্থ্যখাতের গবেষণায় কাজ করতে আগ্রহী। 

একটি প্রত্যুত্তর করুন

Your email address will not be published.