Healthcare-Acquired Infections ( HAIs ), sometimes called Healthcare-Associated Infections, are infections that you get while receiving treatment at a healthcare facility, like a hospital, or from a healthcare professional, like a doctor or nurse.
//

হাসপাতাল — আরোগ্যলাভ নাকি সংক্রমণের উপকেন্দ্র

332 বার পড়া হয়েছে

ব্রিটেনের “দ্য টেলিগ্রাফ” এর একটি প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ-তে মোট ৯০০ রোগী ভর্তি হয়েছিল, যাদের মধ্যে ৪০০ জন মারা যায়। এদের প্রায় ৮০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে তাদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া সুপারবাগ – Superbugs ছিল। এছাড়াও আইসিডিডিআর,বি/ iccdr,b এক গবেষণায় ঢাকার হাসপাতালগুলোর আশেপাশের ড্রেনের পানির নমুনা পরীক্ষা করে শতকরা ৭১ ভাগ ক্ষেত্রেই ‘এনডিএম ওয়ান প্রোডিউসিং ব্যাকটেরিয়া – NDM1 Producing Bacteria’ বা এক ধরনের শক্তিশালী সুপারবাগের অস্তিত্ব পেয়েছে। 

সুপারবাগ এমন এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া যারা কিনা বাজারে প্রচলিত সবধরণের অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে নিজেদের রেজিস্ট্যান্স গড়ে তুলে। তাই প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো সংক্রমনের সময় আর কার্যকর হয় না। ফলাফল হিসেবে নেমে আসে “সেপসিস” এর মতো মারণঘাতী রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে দৈনন্দিন খাবার, সাধারণ ভাইরাল বা ফাঙ্গাল সংক্রমনে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের পাশাপাশি হাসপাতালগুলোর অভ্যন্তরীণ পরিবেশও  এই ধরণের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। 

উপরের ঘটনাগুলো উল্লেখ করার কারণ সাধারণ জনগণকে এ বিষয়ে বোধগম্য করা যে, “হাসপাতালের চিকিৎসা কেবলমাত্র রোগীর সুস্থতা আনে না, বরং এর পরিবেশ নতুন নতুন অসুস্থতা এমনকি মারণঘাতী রোগের ও উদ্রেক করতে পারে”।  হাসপাতালে ভর্তি রোগী কিংবা তাদের দেখতে আসা সুস্থ স্বজনরা কল্পনাও করতে পারেন না যে, কোন প্রাণঘাতী রোগের বাহক হয়ে তারা এখান থেকে বের হচ্ছেন! এ ধরণের রোগকে সাধারণত বলা হয় “নসোকমিয়াল ইনফেকশন/ Nosocomial infections or Healthcare-associated Infections (HAI)” অর্থাৎ হাসপাতাল থেকে সংক্রমিত রোগ। 

হাসপাতাল থেকে সংক্রমিত রোগসমূহ/ Hospital-acquired Infections

  • মূত্রনালীর ইনফেকশন
  • সার্জিক্যাল সাইটে ইনফেকশন
  • নিউমোনিয়া 
  • মেনিনজাইটিস 
  • গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস 
  • সাইনুসাইটিস
  • সেপ্টিসেমিয়া

হাসপাতাল থেকে সংক্রমিত হওয়ার কারণ

ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া কিংবা ফাঙ্গাসের কারণে নসোকমিয়াল ইনফেকশন ছড়ালেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মূলত দায়ী অনুজীবটি হলো ব্যাকটেরিয়া।

স্টেফাইলোকক্কাস অরিয়াস, স্টেপটোকক্কাস, ইকোলাই, সিউডোমোনাস প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া নসোকমিয়াল ইনফেকশন ঘটায়। তন্মধ্যে সিউডোমোনাস আরিগুনেসা ইনফেকশন সবচেয়ে মারাত্মক ও প্রাণঘাতী। 

ব্লাড ট্রান্সফিউশন, এন্ডোস্কোপি, ডায়ালাইসিস ইত্যাদি প্রক্রিয়াতে হেপাটাইটিস বি এবং সি, রোটা ভাইরাস, এইচআইভি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। 

হাসপাতাল থেকে সংক্রমণ কিভাবে ছড়ায়

  • অপরিষ্কার হাতে রোগীর চিকিৎসার কোন কিছু ধরলে।
  • বিভিন্ন ধরনের সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ব্লেড, চিমটা, কাঁচি, নিডল, ক্যাথেটার, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি এক রোগী থেকে অন্য রোগীর ব্যবহারের মধ্যবর্তী সময়ে সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না করা হলে।
  • হাসপাতালের ওয়ার্ড এবং কেবিনে ব্যবহৃত চাদর ও অন্যান্য নৈমিত্তিক ব্যবহার্য জিনিসপত্র সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না করা হলে। 
  • অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া রোগী থেকে সুস্থ মানুষে ছড়ানোর কারণে। 
  • কেবিন এবং ওয়ার্ডে রোগীর সাথে আসা দর্শনার্থীদের যথাযথ সুরক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ না করলে।

রোগীদের ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাটাগরি

বিভিন্ন রোগের (এইডস, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, দীর্ঘদিন যাবৎ শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা) কারণে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। সে ধরণের রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসাকালীন সময়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়াও আর্থ্রাইটিস, জন্ডিস, টিবি প্রভৃতি রোগের কারণে রোগীদের  দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে থাকতে হয় যারাও নসোকমিয়াল ইনফেকশনের ঝুঁকিতে থাকে। সর্বোপরি, শিশু ও বয়স্ক রোগীদের ও নসোকমিয়াল ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে। 

নসোকমিয়াল ইনফেকশন/ Nosocomial infections এর প্রতিকার

প্রথমত রোগীর রক্ত, মূত্র, লালা, শরীরের বিভিন্ন তরল নিঃসরণ, টিস্যু কালচার করে অনুজীবন শনাক্তকরণ করতে হয়। পরবর্তীতে সেই অনুজীবটি যদি ব্যাকটেরিয়া হয়ে থাকে, তাহলে  অ্যান্টিবায়োটিক সেনসিটিভি টেস্ট করতে হবে৷ সাধারণত নসোকমিয়াল ইনফেকশনের চিকিৎসায় পেনিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিন, মেরোপেনামের মতো ব্রড স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।

নসোকমিয়াল ইনফেকশন প্রতিরোধ

নসোকমিয়াল ইনফেকশন প্রতিরোধে রোগী, সেবাদানকারী, দর্শনার্থী এবং হাসপাতাল প্রতিটি স্টেকহোল্ডারকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। 

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা/ Hospital Management

  • হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক প্রয়োগঃ একটি হাসপাতালে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরণের বর্জ্য তৈরী হয়। এসকল ধাতব (অপারেশনে ব্যবহৃত ব্লেড, ছুরি, কাঁচি, সিরিঞ্জ, নিডল), অধাতব (রোগীর ব্যবহৃত গজ, ব্যান্ডেজ), জীবাণু যুক্ত, প্যাথোলজিকাল বর্জ্যগুলো আলাদাভাবে সংগ্রহ ও জীবাণুমুক্তকরণ কিংবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এছাড়াও হাসপাতালে ব্যবহৃত পানি ইটিপি প্ল্যান্টের মাধ্যমে পরিশোধন করে নির্গমনের ব্যবস্থা করা। 
  • ক্রস ইনফেকশন হলো একাধিক ভিন্ন রোগীর মধ্যে এক রোগী থেকে অন্য রোগীতে জীবাণুর সংক্রমণ।    তাই হাসপাতালে বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত রোগীদের আলাদা কেবিন/ওয়ার্ডে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি । বিশেষত আইসিওতে ভর্তি বিভিন্ন সংক্রামক রোগীদের জন্য অবশ্যই আলাদা প্রটোকলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। 
  • হাসপাতালে বেডের চাদর ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা। 
  • চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি (এন্ডোস্কোপ, ব্রনকোস্কোপ) ইত্যাদি ব্যবহারের পর সঠিক পদ্ধতিতে জীবাণুমুক্তকরণ। 
  • আইসিইউ ও সাধারণ ওয়ার্ডে রোগীর সেবায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য হেলথ প্রফেশনালদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ। 
  • ডায়াগনোসিসের জন্য সংগৃহীত বিভিন্ন প্যাথোলজিকাল স্পেসিমেন যথাযথ ব্যাগ বা টেস্টটিউবে পরিবহন। প্রয়োজন শেষে সঠিক নিয়মে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ।
  • হাসপাতালে রোগী ও দর্শনার্থীদের জন্য পৃথক ওয়াশরুম ও বাথরুমের ব্যবস্থা করা।
  • হাসপাতালে ক্যাটারিং সার্ভিসে সরবরাহকৃত খাবারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যথাযথভাবে রান্না করা। 
  • হাসপাতালের সার্বিক পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা ও অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কারণ আঞ্চলিক জনসংখ্যার অনুপাতে অতিরিক্ত রোগী সামাল দিতে হলে সেবার গুণগত মান নিয়ে আপোষ করতে হয়।
  • হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স, ল্যাবরেটরী, ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ইনফেকশন কন্ট্রোল কমিটি গঠন করা যারা কিনা রোগের বিস্তার এবং প্রতিরোধে নজরদারি করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করবে। একই সাথে হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। 
  • এন্টিবায়োটিক রেজিট্যান্সের ব্যাপারে সতর্কীকরণপূর্বক সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা।

রোগী ও দর্শনার্থীদের করণীয়ঃ 

  • হাসপাতালে প্রবেশের সময় যথাযথ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (মাস্ক, ফেসশিল্ড, পিপিই)  ব্যবহার করা।
  • জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো হাতের সংস্পর্শ। প্রতিনিয়ত ডিসইনফেকটেন্ট দ্বারা হাত জীবাণুমুক্তকরণ। 
  • হাসপাতালের ওয়াশরুম ব্যবহারের পর ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ। 

হাসপাতাল থেকে সংক্রমিত রোগ গুলো (infections acquired during hospitalization) মারাত্মক হলেও বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে সেই রোগগুলোর নিয়ন্ত্রণ করা খুবই সম্ভব। সেজন্য চিকিৎসা ব্যবস্থায় নিয়োজিত প্রতিটি স্টেকহোল্ডারকে যত্নশীল ও দ্বায়িত্ববান হতে হবে। কেবলমাত্র তাহলেই ভবিষ্যত পৃথিবীর অন্যতম এক মারাত্মক মহামারী (সুপারবাগ ইনফেকশন) প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। 

আরও পড়তে পারেন

  1. Superbugs linked to eight out of 10 deaths in Bangladesh ICU’s. Available from https://www.telegraph.co.uk/global-health/science-and-disease/superbugs-linked-eight-10-deaths-bangladeshi-icus/
  2. Finding the superbug, the invincible bacteria. Available from https://www.thedailystar.net/star-weekend/spotlight/antibiotic-resistance-real-and-we-caused-it-1429225
  3. Guideline for prevention and control of hospital acquired infection  infection. World health Organization (WHO), 2002. 
  4. Boev C, Kiss E. Hospital-acquired infections: current trends and prevention. Critical Care Nursing Clinics. 2017 Mar 1;29(1):51-65.
  5. Ducel G, Fabry J, Nicolle L. Prevention of hospital acquired infections: a practical guide. Prevention of hospital acquired infections: a practical guide.. 2002(Ed. 2).

আমি সৈয়দ মুমতাহিন মান্নান সিয়াম। পড়াশোনা করছি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের স্নাতক সম্মান শেষ বর্ষে। পড়াশোনার পাশাপাশি বিতর্ক, লেখালেখি, খেলাধুলা ও বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজে নিয়োজিত রয়েছি। দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করার, গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসার স্বপ্ন দেখি।

একটি প্রত্যুত্তর করুন

Your email address will not be published.