Asthma explained in Bangla
/

হাঁপানি — শ্বাসের জন্য লড়াই

431 বার পড়া হয়েছে

মানুষের জীবনে শ্বাসগ্রহণ এবং হৃদস্পন্দন প্রতিনিয়ত ঘটে চলা এক স্বাভাবিক কার্যক্রম। কিছু সময়ের জন্য যদি এই দুটির একটিও বন্ধ থাকে তাহলে মৃত্যু অনিবার্য। তাই এই দুটিকেই সাধারণত জীবনের অস্তিত্ব হিসেবে ধরা হয়। এটা থেকেই বোঝা যায় শ্বাসগ্রহণ মানব জীবনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

হাঁপানি হচ্ছে সেই গুরুত্বপূর্ণ শ্বাসগ্রহণে জটিলতা। এটি শ্বাসনালীর রোগ যা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে। বাংলায় হাঁপানি শব্দের অর্থ হাঁপানো বা হাঁ করে শ্বাস নেওয়া। ইংরেজিতে এটিকে অ্যাজমা (Asthma) বলা হয়।

হাঁপানি হচ্ছে এমন একটি রোগ যেখানে শ্বাসনালী সরু হয়ে যায় অথবা ফুলে যায় এবং ফুসফুস থেকে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা তৈরী হয়। ফলে শ্বাসগ্রহণে সমস্যা দেখা দেয় বা কষ্ট হয়।

হাঁপানি একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার লোক এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং মাত্র পাঁচ শাতংশ রোগী চিকিৎসা লাভ করে।

হাঁপানির ধরণ

বিভিন্ন ধরণের হাঁপানিতে আক্রান্ত প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার সম্মুখীন হয়। যেমনঃ

  • সবিরাম হাঁপানি

এই ধরনের হাঁপানি নিয়মিত বিরতিতে আসে এবং যায়। ফলে মাঝের সময়টাতে রোগী স্বাভাবিক অনুভব করতে পারে।

  • অবিরাম হাঁপানি

অবিরাম হাঁপানি মানে রেগীর বেশিরভাগ সময়ই উপসর্গ থাকে। লক্ষণগুলো হালকা, মাঝারি বা গুরুতর হতে পারে।

  • অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি

অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি পরাগরেণু, পোষা প্রাণী এবং ধূলিকণার মতো অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থ দ্বারা উদ্ভূত হয়। অ্যালার্জিজনিত হাঁপানিতে আক্রান্ত প্রায় ৮০% লোকের সাধারণত খড় জ্বর, একজিমা বা খাবারের অ্যালার্জির মতো সমস্যা থাকে।

  • মৌসুমি হাঁপানি

মৌসুমি হাঁপানি শুধুমাত্র বছরের নির্দিষ্ট সময়ে জেগে ওঠে, যেমনঃ খড় জ্বরের মৌসুমে বা যখন ঠান্ডা হয়। হাঁপানি সবসময় একটি দীর্ঘমেয়াদী অবস্থা হলেও, হাঁপানি উত্তেজক পদার্থগুলো কাছাকাছি না থাকলে লক্ষণমুক্ত হওয়া সম্ভব।

  • পেশাগত হাঁপানি

পেশাগত হাঁপানি হল এমন হাঁপানি যা সরাসরি পেশাগত কাজের সাথে যুক্ত থাকার কারণে হয়। পেশাগত হাঁপানি হতে পারে যদি হাঁপানির উপসর্গ একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে শুরু হয় এবং কর্মস্থলে না থাকার দিনগুলোতে হাঁপানির লক্ষণগুলো উন্নত হয়।

পেশাগত হাঁপানি সাধারণত এক ধরনের অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি।  উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি একটি বেকারিতে কাজ করে তবে তার ময়দার ধুলোতে অ্যালার্জি হতে পারে বা কেউ যদি স্বাস্থ্যসেবাতে কাজ করে তবে ল্যাটেক্স গ্লাভসের ধুলো লক্ষণগুলোকে বাড়িয়ে দিতে পারে।

  • নন-অ্যালার্জিক হাঁপানি

নন-অ্যালার্জিক হাঁপানি এমন এক ধরনের হাঁপানি যা পরাগরেণু বা ধুলার মতো অ্যালার্জি উত্তেজকের সাথে সম্পর্কিত নয় এবং অ্যালার্জিজনিত হাঁপানির চেয়ে কম লক্ষণীয়।

  • ব্যায়াম উদ্ভূত হাঁপানি

কিছু লোকের ক্ষেত্রে হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াই হাঁপানির মতো উপসর্গগুলি শুধুমাত্র ব্যায়ামের মাধ্যমেই শুরু হয়। এটিকে প্রায়শই ‘ব্যায়াম উদ্ভূত হাঁপানি’ বলা হয়। এর কারণ হলো এক্ষেত্রে শ্বাসনালীর সংকোচন হাঁপানি হওয়ার কারণে হয় না।

ব্যায়াম দ্বারা উদ্ভূত শ্বাসনালীর সংকোচন বেশিরভাগ অভিজাত ক্রীড়াবিদ বা যারা খুব ঠান্ডা অবস্থায় কঠোর ব্যায়াম করে তাদের প্রভাবিত করে।

  • কঠিন হাঁপানি

কখনও কখনও অ্যালার্জি সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর কারণে হাঁপানি পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন সেটা কঠিন হাঁপানির পর্যায়ে পড়ে।

কঠিন হাঁপানির ক্ষেত্রে হাঁপানির উপসর্গগুলো দূর হয় না, এমনকি উচ্চ মাত্রার হাঁপানির ওষুধ এবং চিকিৎসা দিয়েও হাঁপানির উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না।

  • মারাত্মক হাঁপানি

হাঁপানিতে আক্রান্ত প্রায় মাত্র ৪% লোক এই ধরনের হাঁপানিতে ভুগে। এটি গুরুতর হাঁপানি হিসেবে পরিচিত। এই ধরনের হাঁপানি হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায় যদি সপ্তাহে দুটির বেশি হাঁপানি আক্রমণ হয়, চিকিৎসা নেওয়ার পরেও হাঁপানির উপসর্গগুলো অব্যাহত থাকে এবং সপ্তাহে তিন বা তারও বেশি ইনহেলার ব্যবহার করলে।

  • শৈশব হাঁপানি

হাঁপানি প্রায়শই শৈশবে শুরু হয়। হাঁপানি রোগে আক্রান্ত কিছু শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটির উন্নতি হয় বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। এটি শৈশব হাঁপানি হিসেবে পরিচিত। তবে মনে রাখতে হবে, এটি পরবর্তী জীবনে ফিরে আসতে পারে।

  • প্রাপ্তবয়স্কদের হাঁপানি

কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর প্রথমবার হাঁপানি ধরা পড়ে। এটিই প্রাপ্তবয়স্কদের হাঁপানি হিসেবে পরিচিত।

  • রাত্রি হাঁপানি

এক্ষেত্রে হাঁপানির লক্ষণগুলো রাতে দেখা দেয় এবং লক্ষণসমূহ খারাপের দিকে যায়।

হাঁপানি বা এজমা লক্ষণ

হাঁপানির সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণসমূহ হলোঃ

  • শ্বাসকষ্ট

শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা শ্বাসকষ্ট হওয়া হাঁপানির প্রধান লক্ষণ। কিছু ক্ষেত্রে গভীর শ্বাস নিতে বা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে। যাদের খুব শ্বাসকষ্ট হয় তাদের কথা বলতে, খেতে বা ঘুমাতে কষ্ট হয়। হাঁপানিতে আক্রান্ত মানুষ যখন ব্যায়াম করেন তখন শ্বাসকষ্ট আরো বেড়ে যায়।

  • কাশি

বারবার ফিরে আসা কাশি হাঁপানির একটি উপসর্গ।  হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি যদি কাশির সাথে হাঁপানির অন্যান্য উপসর্গও থাকে, যেমনঃ শ্বাসকষ্ট, বুকে টান ইত্যাদি।

হাঁপানিতে কাশি সবার ক্ষেত্রে হয় না। কাশি সাধারণত শুষ্ক থাকে বা অনিয়ন্ত্রিত হাঁপানিতে আক্রান্ত কারো কাশির সময় ঘন পরিষ্কার শ্লেষ্মা থাকতে পারে।

  • শিসের শব্দ

শ্বাসকষ্ট হলে শ্বাসনালী থেকে একটি  শিসের মতো শব্দ আসে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শ্বাস ছাড়ার সময় এটি ঘটে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের শব্দ পরিলক্ষিত নাও হতে পারে।

  • বুকে টান

বুকের টানকে প্রায়শই বর্ণনা করা হয় যে বুকে ভারী ভার থাকা বা আপনার চারপাশে একটি অংশ শক্ত হয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হওয়াকে।

এটি একটি নিস্তেজ ব্যথা বা বুকে একটি ধারালো ছুরিকাঘাতের মতো অনুভব হতে পারে। এটা সহ্য করতে অসুবিধা হতে পারে।

এই লক্ষণগুলোর এক বা একাধিক থাকলে বোঝা যায় হাঁপানি আছে। যদি এই উপসর্গগুলি বারবার ফিরে আসতে থাকে, রাতে আরও খারাপ হয়, অথবা ব্যায়াম, আবহাওয়া বা অ্যালার্জিতে খারাপ হয় তাহলে হাঁপানি নিশ্চিত করা যায়।

হাঁপানি আক্রমণে সৃষ্ট সমস্যা

  • শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকে টান বেড়ে যাওয়া
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি দ্রুত হয়ে যাওয়া
  • হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া
  • কথা বলতে অসুবিধা
  • উদ্বেগ বা আতঙ্কের অনুভূতি
  • ফ্যাকাশে, ঘর্মাক্ত মুখ
  • ঘুুমে সমস্যা এবং ক্লান্তিভাব
  • ঠোঁট এবং আঙ্গুল নীল হয়ে যাওয়া
  • হাঁপানির আক্রমণ মারাত্মক পর্যায়ে গেলে রোগীর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

হাঁপানি কেন হয়

ভিন্ন ভিন্ন রোগীর ক্ষেত্রে হাঁপানির কারণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। কারণগুলো হলোঃ

  • বায়ুবাহিত অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী কণা, যেমনঃ পরাগরেণু, ধূলিকণা, পোষা প্রাণীর খুশকি ইত্যাদি
  • শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, যেমনঃ সাধারণ সর্দি
  • শারীরিক ব্যায়াম
  • আবহাওয়া, যেমনঃ তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তন, ঠান্ডা বাতাস, বাতাস, বজ্রঝড়, তাপ এবং আর্দ্রতা ইত্যাদি
  • বায়ু দূষণকারী পদার্থ, যেমনঃ ধোঁয়া
  • পারফিউম বা ক্লিনিং সলিউশন থেকে তীব্র গন্ধ
  • ধূমপান
  • শক্তিশালী আবেগ অনুভূতি
  • মানসিক চাপ 
  • চিংড়ি, শুকনো ফল, প্রক্রিয়াজাত আলু, বিয়ার, ওয়াইন এবং সালফাইট ও প্রিজারভেটিভ যুক্ত পানীয়
  • গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD), এমন একটি অবস্থা যেখানে পাকস্থলীর অ্যাসিড আপনার গলায় ফিরে আসে
  • বিশেষ কিছু ঔষধ, যেমনঃ বিটা ব্লকার (Beta blocker), অ্যাসপিরিন (Aspirin) এবং ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস, যেমনঃ আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) এবং নেপ্রোক্সেন (Naproxen) ইত্যাদি।

হাঁপানি রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা

উপরোক্ত হাঁপানির লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। ডাক্তার রোগীকে পর্যবেক্ষন করে একজন ফুসফুসের ডাক্তারের কাছে পাঠাতে পারে, যাকে বলা হয় পালমোনোলজিস্ট বা অ্যালার্জি এবং ইমিউনোলজির বিশেষজ্ঞ।

ডাক্তার একটি শারীরিক পরীক্ষা দিয়ে শুরু করবেন এবং রোগীর লক্ষণ এবং চিকিৎসা ইতিহাস সম্পর্কে জানবেন। রোগীর ফুসফুস কতটা ভাল কাজ করে তা দেখার জন্য যেসব পরীক্ষা দিতে পারেন সেগুলো হলোঃ

  • স্পাইরোমেট্রি

এই সাধারণ শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা পরিমাপ করে যে মানুষ ফুসফুস থেকে কতটা বাতাস বের করে এবং কত দ্রুত।

  • পীক ফ্লো

এটি পরিমাপ করে যে মানুষের ফুসফুস কতটা ভালোভাবে বাতাস বের করে দেয়। এগুলোর নির্ভুলতা স্পাইরোমেট্রির চেয়ে কম।

  • মেথাকোলিন চ্যালেঞ্জ

এই পরীক্ষায় হাঁপানি উত্তেজক পদার্থ (মেথাকোলিন) ব্যবহার করা হয়। শিশুদের তুলনায় প্রাপ্তবয়স্কদের এই পরীক্ষা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রোগীর উপসর্গ এবং স্পাইরোমেট্রি পরীক্ষা স্পষ্টভাবে হাঁপানি না দেখালে এটি দেওয়া হতে পারে। এই পরীক্ষার সময়, রোগীর স্পাইরোমেট্রির আগে এবং পরে মেথাকোলিন নামক একটি রাসায়নিক শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে দেওয়া হয় এবং দেখা হয় যে এটি রোগীর শ্বাসনালীকে সরু করে দেয় কিনা। যদি ফলাফল কমপক্ষে ২০% কমে যায়, তাহলে আপনার হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তীতে মেথাকোলিনের প্রভাবকে দূর করার জন্য অন্য ঔষধ দেওয়া হয়।

  • শ্বাসে নাইট্রিক অক্সাইড পরীক্ষা

এই পরীক্ষায় রোগীকে একটি মেশিনের সাথে সংযুক্ত একটি টিউবে শ্বাস নিতে হয় যা রোগীর শ্বাসে নাইট্রিক অক্সাইডের পরিমাণ পরিমাপ করে। মানুষের শরীর স্বাভাবিকভাবে এই গ্যাস তৈরি করে, তবে শ্বাসনালী স্ফীত হলে এর মাত্রা বেশি হতে পারে।

এছাড়াও যেসব পরীক্ষা দিতে পারে সেগুলো হলোঃ

  • বুকের এক্স-রে 

এটি হাঁপানি পরীক্ষা নয়, তবে ডাক্তার এটি ব্যবহার করে নিশ্চিত হতে পারে যে অন্য কিছু রোগীর লক্ষণের কারণ হচ্ছে কিনা।

  • সিটি স্ক্যান

রেগীর ফুসফুস এবং সাইনাসের একটি স্ক্যান শারীরিক সমস্যা বা রোগ (যেমনঃ সংক্রমণ) শনাক্ত করতে পারে যা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।

  • অ্যালার্জি পরীক্ষা

এটি রক্ত ​​বা ত্বকের পরীক্ষা। এর মাধ্যমে রোগীর কোন কোন বিষয়ে অ্যালার্জি আছে তা জানা যায়।

  • স্পুটাম ইওসিনোফিলস

এই পরীক্ষাটি লালা এবং শ্লেষ্মার মিশ্রণে উচ্চ মাত্রার শ্বেত রক্তকণিকা খুঁজে বের করে যা রোগীর কাশির সময় বের হয়।

হাঁপানির চিকিৎসা

হাঁপানির চিকিৎসা রোগীর উপসর্গগুলোকে সহজ করতে পারে। ডাক্তারে নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা এবং ঔষধের রূপরেখা তৈরি হবে। তার অন্তর্ভুক্ত হতে পারেঃ

ইনহেলড কর্টিকোস্টেরয়েড

এই ওষুধগুলো দীর্ঘমেয়াদে হাঁপানির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তার মানে রোগীকে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন এগুলো গ্রহণ করতে হবে। এগুলো শ্বাসনালীর ভিতরে ফোলা প্রতিরোধ করে এবং কম শ্লেষ্মা তৈরি করতে সহায়তা করে। ফুসফুসে ঔষধ পৌছানোর জন্য ইনহেলার নামক একটি ডিভাইস ব্যবহার করতে হয়। সাধারণত যে কর্টিকোস্টেরয়েডগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলোঃ 

  • বেক্লোমেথাসোন (Beclomethasone)
  • বুডেসোনাইড (Budesonide)
  • ফ্লুটিকাসোন (Fluticasone)

লিউকোট্রিন মডিফায়ার

এটি আরেকটি দীর্ঘমেয়াদী হাঁপানির চিকিৎসা। এই ঔষধগুলো লিউকোট্রিনকে ব্লক করে। লিউকোট্রিন শরীরের এমন একটা জিনিস যা হাঁপানির আক্রমণকে উৎসাহিত করে। এগুলো দিনে একবার বড়ি হিসেবে খেতে হয়। যেমনঃ

  • মন্টেলুকাস্ট (Montelucast)
  • জাফিরলুকাস্ট (Zafirlucast)

দীর্ঘ কার্যকর বিটা-অ্যাগোনিস্ট

এই ঔষধগুলো রোগীর শ্বাসনালীকে ঘিরে থাকা পেশী ব্যান্ডগুলোকে শিথিল করে। এদের ব্রঙ্কোডাইলেটরও বলা হয়। একটি ইনহেলার দিয়ে এই ঔষধগুলো গ্রহণ করতে হয়। যেমনঃ

  • সাইক্লেসোনাইড (Ciclesonide)
  • ফর্মোটেরোল (Formoterol)
  • মোমেটাসোন (Mometasone)
  • সালমিটারোল (Salmeterol)

কম্বিনেশন ইনহেলার

হাঁপানি কমানোর জন্য এই ডিভাইসটি রোগীকে একই সাথে একটি ইনহেলড কর্টিকোস্টেরয়েড এবং একটি দীর্ঘ কার্যকর বিটা-অ্যাগোনিস্ট সরবরাহ করে। যেমনঃ

  • বুডেসোনাইড এবং ফর্মোটেরল
  • ফ্লুটিকাসোন এবং সালমিটারোল
  • মোমেটাসোন এবং ফরমোটেরোল

থিওফাইলাইন

এটি শ্বাসনালী খুলে দেয় এবং রোগীর বুকের আঁটসাঁটতা কমায়। এই দীর্ঘমেয়াদী ঔষধটি সরাসরি বা ইনহেলার দিয়ে মুখের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়।

স্বল্প কার্যকর বিটা-অ্যাগোনিস্ট

এগুলো রেসকিউ মেডিসিন বা রেসকিউ ইনহেলার নামে পরিচিত। এগুলো শ্বাসনালীর চারপাশের পেশীগুলোর ব্যান্ডগুলোকে আলগা করে বায়ু চলাচল সহজ করে। যেমনঃ

  • অ্যালবিউটেরল (Albuterol)
  • লেভাবিউটেরল (Levalbuterol)

অ্যান্টিকোলিনার্জিকস

এই ব্রঙ্কোডাইলেটরগুলো শ্বাসনালীর চারপাশে পেশী ব্যান্ডগুলিকে শক্ত হতে বাধা দেয়। যেমনঃ

  • ইপ্রাট্রোপিয়াম (Ipratropium)
  • টিওট্রোপিয়াম (Tiotrpoium)

মৌখিক এবং শিরায় কর্টিকোস্টেরয়েড

হাঁপানি আক্রমণের সময় রোগীকে একটি রেসকিউ ইনহেলারের সাথে মৌখিকভাবে এগুলো নিতে হয়। আর যদি খারাপ হাঁপানির আক্রমণের জন্য রোগী হাসপাতালে থাকে তবে সরাসরি শিরায় স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এগুলো শ্বাসনালীতে ফোলাভাব এবং প্রদাহ কমিয়ে দেয়। যেমনঃ

  • মিথাইলপ্রেডনিসোলোন (Methylprednisolone)
  • প্রেডনিসোলোন (Prednisolone)
  • প্রেডনিসোন (Prednisone)

এছাড়াও কিছু ঔষধ আছে যেগুলো গুরুতর হাঁপানির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে যখন উপরোক্ত ঔষধগুলো ব্যবহারেও উপসর্গ কমে না। যেমনঃ ওমালিজুমাব (Omalizumab) অ্যালার্জি দ্বারা সৃষ্ট হাঁপানির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি প্রতি ২ থেকে ৪ সপ্তাহে একটি ইনজেকশন হিসাবে রোগীকে দেওয়া হয়।

কিছু ঔষধ শরীরের ইমিউন কোষগুলিকে এমন জিনিস তৈরি করা থেকে বিরত রাখে যা প্রদাহ সৃষ্টি করে। যেমনঃ 

  • বেনরালিজুমাব (Benralizumab)
  • মেপোলিজুমাব (Mepolizumab)
  • রেসলিজুমাব (Reslizumab)

হাঁপানি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ঔষধ অন্যতম চাবিকাঠি। তবে তার সাথে দৈনন্দিন জীবনযাপনে বাড়িতে কিছু নিয়ম মেনে চললে সহায়ক হতে পারে। যেমনঃ

  • হাঁপানি উত্তেজক জিনিস এড়িয়ে চলা
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা
  • স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা 
  • এমন অবস্থার যত্ন নেওয়া যা উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে, যেমনঃ GERD
  • লক্ষণগুলি কমাতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা যাতে কম ঔষধের প্রয়োজন হয়

হাঁপানি এমন একটি রোগ যাকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা যায় না। তবে সঠিক চিকিৎসা এবং নিয়ম মেনে জীবনযাপন করলে এর লক্ষণগুলোকে একদম কমিয়ে আনা যায় এবং সুস্থ থাকা যায়।

পরিশেষে, বায়ুর সমুদ্রে ডুবে আছে মানুষ। সেই বায়ুর সমুদ্রে ডুবে থেকে সবাই বুক ভরে শ্বাস নিতে চায়। কিন্তু সেই পথে বাঁধা হয়ে দাড়ায় হাঁপানি নামক রোগ। কেড়ে নেয় মানুষের বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার আনন্দ। মানুষ তখন লড়তে থাকে কিছুটা বাতাস শরীরে গ্রহণের জন্য। বেঁচে থেকেও যেন মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করতে থাকে মানুষ। তাই হাঁপানিকে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

আমি হৃদয় কুমার ঘোষ। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী বিভাগে পঞ্চম বর্ষে অধ্যয়নরত। নিজের মনের অভিব্যক্তিগুলোকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করার জন্যই মূলত লেখালেখিতে হাতেখড়ি। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানার আগ্রহও সবসময়ই ছিল। নিজের জানাকে অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যও লেখার চেষ্টা করতাম।

তাছাড়া একজন বিতার্কিক হিসেবে যেকোনো বিষয়কে যুক্তিসঙ্গতভাবে গুছিয়ে উপস্থাপনের যে চর্চা তা আমার লেখালেখিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে বলে আমি মনে করি। একটা কিছু লেখার পরে বার বার পড়ি আর ভাবতে থাকি, কিভাবে লেখাটাকে আরও সহজ, সুন্দর এবং সাবলীলভাবে পাঠকের নিকট উপস্থাপন করা যায়। এটা করতে গিয়ে আমি কখনোই বিরক্তবোধ করি না বরং আমার ভালো লাগে। আর ভালো লাগার জায়গায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে আমি কখনোই কার্পণ্য করি না।

1 Comment

একটি প্রত্যুত্তর করুন

Your email address will not be published.