LSD is harming the youth in Bangladesh
/

ভয়ঙ্কর মাদক LSD যুবসমাজকে ঠিক কতটা ক্ষতির মধ্যে ফেলছে?

579 বার পড়া হয়েছে

মাদকাসক্তি এবং মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার হচ্ছে চিকিৎসাগত উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে শরীর বা মনের অবস্থা পরিবর্তন করতে কোনো রাসায়নিক পদার্থের দীর্ঘস্থায়ী বা অভ্যাসগত ব্যবহার। আসক্ত ব্যক্তি নিজের এবং সমাজের শারীরিক ক্ষতি সত্ত্বেও মাদক ব্যবহারের অব্যাহত থাকার মনস্তাত্ত্বিক নির্ভরতা বোধ করে।

মনস্তাত্ত্বিক নির্ভরতা হল ব্যক্তিগত অনুভূতি যা ব্যবহারকারীর সুস্থতার অনুভূতি বজায় রাখার জন্য ওষুধের প্রয়োজন, শারীরিক নির্ভরতা (সহনশীলতা অর্জনের পর প্রাথমিক প্রভাব পাবার জন্য ক্রমবর্ধমান বড় ডোজ প্রয়োজন) এবং ব্যবহারকারী যখন বিরত থাকে তখন প্রত্যাহারের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া। অর্থনীতি, সমাজ এবং পরিবারে মাদকাসক্তির অনেক প্রভাব রয়েছে। মাদকাসক্তি ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে এবং তাদেরকে একটি পরিবার ও সমাজের বোঝা করে তোলে। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইয়াবা বড়ি ধরার সংখ্যা ২০০৮ সালে ৩৬,৫৪৩ থেকে ২০১৪ সালে ২৯,৪৫০,১৭৮ হয়েছিলো। মারিজুয়ানা/ গাঁজা এবং হেরোইনের মতো মাদকের সহজলভ্যতা সত্ত্বেও, ইয়াবা (মেথামফেটামিন এবং ক্যাফিনের মিশ্রণ) দেশে সর্বাধিক প্রচলিত মাদক হিসাবে পরিচিত রয়েছে। এবং আশ্চর্যজনকভাবে, গত ১০-১৫ বছরে, বিশ্বব্যাপী মেথামফেটামিনের ব্যবহার বৃদ্ধি অন্য যে কোনও ওষুধের চেয়ে এগিয়ে গেছে।

আরো পড়ুন – ঘুমের ঔষধ সম্পর্কে কি জানতে চান – Straight Facts on Sleep Aids

এদিকে, সরকারী এবং বেসরকারীভাবে বলা হয়েছে যে অন্যান্য মারাত্মক মাদক যেমন কোকেন, আইস এবং এলএসডি (সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা নিশ্চিত হওয়া) ও দেশে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশের বর্তমান মাদকাসক্তির চিত্র

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমগ্র বিশ্বে বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মাদকাসক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি আসক্তদের বর্তমান অনুপাত দেখে শঙ্কিত৷ যুবক ও কিশোর-কিশোরীদের (১৫-৩০ বছর)  মধ্যে মাদক সেবনের প্রবণতা বেশি। ছাত্ররা বেশিরভাগই মাদক সেবনের শিকার হচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত তাদের শিক্ষার মান এবং স্কুল ও কলেজে উপস্থিতি কমিয়ে দিচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ড্রাগকে সংজ্ঞায়িত করে কৃত্রিম, অর্ধ-সিন্থেটিক বা প্রাকৃতিক রাসায়নিক পদার্থ হিসেবে যা ডায়াগনস্টিক, থেরাপিউটিক বা অন্যান্য জটিলতা উপশম করতে সক্ষম। অন্যদিকে, মাদকাসক্তরা কিছু এই ধরনের রাসায়নিক পদার্থকে ব্যবহার করে তাদের মনস্তাত্ত্বিক নির্ভরতা মেটাতে।

একজন কিশোর-কিশোরীর বিভিন্ন কারণে মাদকে জড়িয়ে পড়ে। অত্যধিক মানসিক চাপ অন্যতম প্রধান কারণ। গবেষণার মাধ্যমে নির্ধারিত কারণগুলির মধ্যে রয়েছে কৌতূহল এবং উত্তেজনা, কাজের ক্ষেত্রে ক্রমাগত ব্যর্থতা বা অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার জন্য হতাশা। কেউ কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে কারণ তারা মাদকের অপব্যবহার এবং জীবন উপভোগের পশ্চিমা সংস্কৃতি অনুসরণ করার চেষ্টা করে। অন্যান্য অনেক কারণের মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য, মাদকের সহজলভ্যতা, প্রেমে হতাশা এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে মানসিক চাপ। 

বাংলাদেশে তিন ধরনের মাদক পাওয়া যায় – আফিম (হেরোইনের মতো), গাঁজা এবং ঘুমের ওষুধ (সেডক্সেন)। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে হেরোইন সবচেয়ে মারাত্মক মাদক। সাম্প্রতিক সময়ে ইয়াবা জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং একটি ‘ফ্যাশনেবল’ মাদকে পরিণত হয়েছে। কম দাম এবং সহজলভ্যতার কারণে কাশির সিরাপ ফেনসিডিল জনসাধারণের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুসারে, বেশিরভাগ মাদক ব্যবহারকারী তরুণ, তাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর। এদিকে, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, জার্নাল অফ হেলথ, পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রিশন দ্বারা পরিচালিত একটি পৃথক সমীক্ষা দেখায় যে রাজধানীতে ব্যবহারকারীদের ৭৯.৪% পুরুষ এবং ২০.৬%।

নতুন আতঙ্ক এলএসডি (LSD)

এল এস ডি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন সুইস রসায়নবিদ আলবার্ট হফম্যান। তবে তিনি এটিকে মাদক দ্রব্য হিসেবে মোটেও আবিষ্কার করেননি বরং এরগট (ergot) নামক এক ধরনের প্যারাসাইটিক ফাঙ্গাস দমনের কার্যকরী ওষুধ হিসেবে এটি ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিল। অতঃপর হফম্যান যখন এই রাসায়নিকটি দিয়ে কম রক্তচাপ, মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উন্নতি ও শ্বাস-প্রশ্বাস উন্নত করার ওষুধ তৈরির জন্য কাজ করছিলেন তখনই নিজের অজান্তে এল এস ডি নামক আধুনিককালের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ভয়াবহ ড্রাগের প্রভাব আবিষ্কার করেন।

এল এস ডি এক ভয়াবহ মাদকদ্রব্য যা সম্প্রতি শনাক্ত করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। নিজের গলায় দা চালিয়ে আত্মহত্যা করা হাফিজুর এল এস ডি মাদকে আসক্ত ছিলেন এবং এই মাদক নেয়ার পরই আত্মহত্যা করে হাফিজুর। পুলিশ অনাকাঙ্ক্ষিত এই মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রকে গ্রেফতার করে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ভয়ংকর এলএসডির বিষয়ে তথ্য পায়। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা গেছে, বিদেশ থেকে এই মাদক দেশে আনা হচ্ছে যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় উচ্চবিত্তদের মাঝে বেশি ছড়িয়ে পড়ছে। এল এস ডি মাদক অনেক পুরোনো হলেও এটি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সহজলভ্য ছিল না কিন্তু সম্প্রতি এর ব্যবহার বাংলাদেশে অস্বাভাবিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। 

বর্তমানে বাংলাদেশে এই এল এস ডি ধনিকশ্রেণীর পাশাপাশি ছাত্রদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশে যুবসমাজ এর দ্বারা বিরূপ প্রভাবে প্রভাবিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মস্তিষ্ক বিকৃত করার পাশাপাশি এটি মানুষকে আত্মঘাতী করে তুলে এজন্য গবেষকরা এটিকে যুব ও ছাত্র সমাজের অগ্রগতির পথে হুমকিস্বরূপ বলে মনে করছেন। 

কি এই ভয়াবহ শব্দ ‘এলএসডি/ LSD’?

লাইসারজিক অ্যাসিড ডাইথাইলামাইড (lysergic acid diethylamide – LSD) হল একটি সিন্থেটিক রাসায়নিক, যা এরগটে পাওয়া একটি পদার্থ থেকে তৈরি। এটি এক ধরনের ছত্রাক দমনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে যা রাইকে (rye) সংক্রমিত করে।

ভয়ঙ্কর মাদক LSD যুবসমাজকে ঠিক কতটা ক্ষতির মধ্যে ফেলছে?
Lysergic acid diethylamide – LSD এর রাসায়নিক গঠন

এলএসডি সাইকিডেলিক (psychedelic) নামে পরিচিত একটি ওষুধ গ্রুপের অন্তর্গত। যখন ছোট ডোজ নেওয়া হয়, এটি উপলব্ধি, মেজাজ (mood) এবং চিন্তাভাবনায় হালকা পরিবর্তন আনতে পারে। বড় ডোজ ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন (visual hallucination) এবং স্থান-সময়ের বিকৃতি তৈরি করতে পারে। কখনও কখনও, এলএসডি হিসাবে যা বিক্রি হয় তা আসলে অন্যান্য রাসায়নিক হতে পারে যেমন এন-মিথোক্সি বেনজাইল (Nmethoxybenzyl) বা অন্যান্য সাইকোঅ্যাকটিভ পদার্থ। এগুলি বেশ বিপজ্জনক কারণ তাদের গুণমান অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এসব পদার্থের অত্যধিক গ্রহণ মারাত্মক হতে পারে এবং মৃত্যু হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।

কীভাবে যুবসমাজ LSD দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে?

এল এস ডি সেবনের পর মস্তিষ্কে মারাত্মক রকমের প্রভাব পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের গবেষণায় প্রাপ্ত যে, এই মাদকটি মানুষের মস্তিষ্কের সেরোটোনিন নামক রাসায়নিকের কার্যকলাপকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করে, অনুভূতি এবং পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন করে। এলএসডি সেবনের পর সাধারণত মানুষ ‘হ্যালুসিনেট’ করে বা এমন দৃশ্য দেখে যার বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই এবং এই ধরনের অলীক দৃশ্য দেখার কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়। কেউ কেউ এই মাদক সেবনের পর ভালো অনুভূতি বোধ করেন আবার অনেকেই উন্মাদ হয়ে ভয়ঙ্কর কিছু পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়েই বিপদগ্রস্ত হয়ে থাকেন।

আমরা জানি, মস্তিষ্কের পেছনে অবস্থিত ভিজুয়াল কর্টেক্স দৃশ্যমান বস্তুর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও উপলব্ধি করে কিন্তু এল এস ডি সেবন করা ব্যক্তির চোখের সামনে দৃশ্যমান বস্তু উক্ত অবস্থান থেকে আসে না বরং তারা তাদের কল্পনার জগৎকে চোখের সামনে দেখতে পায়। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক যোগাযোগব্যবস্থা নষ্ট হওয়ার কারণে ব্যক্তি ইগো ডিসোল্যুশন (ego-dissolution) নামে নামক এক ধরনের সমস্যায় ভোগেন। অর্থাৎ, নিঃসন্দেহে এই মাদক টি যুব সমাজে ছড়িয়ে পড়লে এটি তাদের মেধা এবং প্রতিভা বিকাশের পথে বৃহৎ বাধাস্বরূপ কাজ করবে। 

এই ভয়াবহ মাদকাসক্তির ফলে মানুষের হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় সেই সাথে অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, অতিরিক্ত ঘামসহ নানা ধরণের মানসিক সমস্যাও তৈরি হয়। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত শারীরিক অক্ষমতা বাংলাদেশ  ছাত্র  সমাজে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

এল এস ডি গ্রহণ করে ভুল রাস্তা দেখে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া, বাড়ির জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়া বা অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঘটনা অনেক ঘটেছে বলে জানা যায়। এ ছাড়াও বিষণ্ণতা বা দুশ্চিন্তায় ভোগা ব্যক্তিরা এলএসডি গ্রহণের পর আরো বেশি  হতাশাগ্রস্থ হয় বলে জানা গিয়েছে অনেক গবেষণায়।

যুবসমাজ যে কোন দেশের মূল্যবান সম্পদ। জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি যুব সমাজের সক্রিয়  অংশগ্রহনের  উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। এলএসডি সহ এ ধরনের মাদকদ্রব্য বিভিন্ন ধরনের শারীরিক এবং মানসিক বিকারগ্রস্থতা সৃষ্টির মাধ্যমে যুবসমাজের মেধা, সৃজনশীলতা, সাহস ও প্রতিভাকে  মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করে, যে প্রক্রিয়া একটি জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্ক্রতিক পরিমন্ডলকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।

সরকারের পদক্ষেপ

সরকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন কে আরো কঠোর ও যুগোপযোগী করে মাদক নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।  ইতোমধ্যেই সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে মাদক নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে ,

  • মাদকের আগ্রাসী ব্যাধি থেকে দেশের যুবসমাজকে বাঁচাতে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে ও মাদক সেবন রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করার কথা বলেছেন।
  • মাদকের ব্যবহার হতে যুব সমাজকে বাঁচাতে সরকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭৫ শতাংশ পরিবর্তন করে এবং নতুন আইনে ৭ টি ধারা ও ২৮ টি সংজ্ঞা সংযোজিত করেছে।
  • মাদক চোরাচালান ও মাদক পাচার ঠেকাতে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।
  • মাদকের সাথে জড়িত অপরাধভেদে শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও ১ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
  • মাদকাসক্তি রোধে মানসম্পন্ন মাদকাসক্তি চিকিৎসাকেন্দ্র, পরামর্শ কেন্দ্র ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে সরকার।

কীভাবে যুবসমাজকে এলএসডি থেকে বের করে আনা যায়?

তরুণ প্রজন্ম দেশের সম্পদ। তাদের ওপরই দেশের ভবিষ্যত নির্ভর করে কেননা দেশের নেতৃত্ব তারাই দেবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থানের আড়ালে যে যুবসমাজের একাংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে, সেটা তারা খুব একটা খেয়াল করছে বলে মনে হয় না। অথচ মাদক চোরাচালান ও চোরাকারবারি চক্র নির্মূল করে দেশের সম্পদ যুবসমাজকে রক্ষা করতে তাদের সহাবস্থানের কোন বিকল্প নেই। সেইসাথে নিম্নলিখিত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের যুবসমাজকে এল এস ডি নামক ভয়াবহ মাদকের হাত থেকে বের করে আনা সম্ভব,

  • মাদকের আগ্রাস দূর করার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত যথাযথ আইন থাকা আবশ্যক। সম্প্রতি দেশের নীতিনির্ধারকদেরই একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে যা অত্যন্ত হতাশাজনক। যাই হোক, এলএসডি সহ অন্যান্য মাদক নিরসনকল্পে  যথাযথ আইন নির্দেশনা জারি এবং তার সঠিক বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। 
  • মাদকের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ক্রসফায়ার করে এর বিনাশ সম্ভব নয় কারণ এটি অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ নয়। ভাসমান মাদক ব্যবসায়ীদের ক্রসফায়ার না করে, মাদকের উৎস, আগমন, কারা এর সাথে জড়িত-এসবের মূলে যেতে হবে এবং মূল হোতাদের ধরতে হবে। তারা যত প্রভাবশালী হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রধান মন্ত্রীর জারিকৃত জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করতে হবে।
  • উন্নত দেশগুলোতে পারিবারিক শৃঙ্খলা ভেঙে যাওয়ায় যুব সমাজকে বিপথগামী হতে দেখা গিয়েছে। তো, সে ক্ষেত্র বিবেচনায় এলএসডি সহ অন্যান্য মাদক নির্মূলকরণে পরিবার, সমাজ, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
  • তরুণদের বেকারত্ব, কর্মসংস্থান ও সুস্থ বিনোদনের অভাব মাদক ব্যবহারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এজন্যে তরুণদের খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, সুস্থ বিনোদন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। 

মাদকাসক্তি প্রতিরোধ করা বিশ্বের সকল জাতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের অগ্রগতিতে যুব সমাজের সক্রিয়  অংশগ্রহন অত্যন্ত প্রয়োজন। অথচ বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব্য বিশেষ করে সম্প্রতি বহুল  পরিচিত এলএসডি এই যুবসমাজকে ধীরে ধীরে হুমকির পথে ঠেলে দিচ্ছে যার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাফিজুর রহমানের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি।

সুতরাং, অন্যান্য মাদকদ্রব্যসহ এই নতুন আতঙ্ক এলএসডির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য সরকারের পাশাপাশি দেশের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদকের প্রাপ্যতা নির্মূল করার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মাদকের চাহিদা ও ব্যবহার কমিয়ে আনাসহ  প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।  ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের সচেতনতা এবং সম্মিলিত উদ্যোগে যুবসমাজকে ঝুঁকিপূর্ণ এই পথে  পরিচালনা থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের।

আমরা যদি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে একযোগে মাদককে ‘না’ বলি তবে একত্রিত ‘না’ এর শক্তি আমাদের দেশ এবং দেশের মানুষকে এলএসডি নামক এই অভিশাপের হাত থেকে অত্যন্ত কার্যকর ভাবে রক্ষা করতে সক্ষম হবে।

রেফারেন্স 

  1. Shazzad MN, Abdal SJ, Majumder MS, Ali SM, Ahmed S. Drug addiction in Bangladesh and its effect. Medicine today. 2013;25(2):84-9.
  2. Sarkar S, Meher MM, Parvez MM, Akther M. Occurrences of lumpy skin disease (lsd) in cattle in Dinajpur sadar of Bangladesh. Research in Agriculture Livestock and Fisheries. 2020 Dec 31;7(3):445-55.
  3. Khan MJ. LSD mailed to Bangladesh: Detectives say syndicates used postal service to bring them in from the Netherlands for 4 yrs. The Daily Star. 2021 May 30. 

আমি মেরিনা আকতার, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.ফার্ম (প্রফেশনাল) সম্পন্ন করেছি এবং বর্তমানে একই বিভাগে মাস্টার্স কোর্সে অধ্যয়নরত আছি। বিভিন্ন তথ্যমূলক ওয়েবসাইট, ব্লগ, অনলাইন জার্নাল এবং নিবন্ধগুলি নিয়মিত অনুসরণ করি এবং সৃজনশীল কন্টেন্ট লিখালিখি করাতে বেশ আগ্রহ পাই। যুক্তি ও আলোচনার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করাই আমার নিরন্তর চেষ্টা। আমি ভবিষ্যতে একজন গবেষক হতে চাই।

একটি প্রত্যুত্তর করুন

Your email address will not be published.