ডায়াবেটিসে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করা কেন জরুরি!
/

ডায়াবেটিসে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করা কেন জরুরি!

633 বার পড়া হয়েছে

মিসেস ফারাহ্ একজন হাসিখুশি স্বাস্থ্যবান মধ্যবয়স্কা মহিলা। তিনি হঠাৎ করে খেয়াল করলেন উনার স্বাস্থ্য খুব দ্রুত ভেঙ্গে যাচ্ছে, নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেও তিনি সুস্থ থাকছেন না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর দেখা যায় উনার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেশি। ডাক্তার এই অবস্থাকে ‘ডায়াবেটিস’ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং উনাকে ঔষধের পাশাপাশি বেশ কিছু পরামর্শ মেনে চলতে বলেন।

বেশ কিছুদিন পর তিনি কিছুটা সুস্থ বোধ করেন এবং চেকআপের জন্য পুনরায় ডাক্তারের কাছে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার সিদ্ধান্ত দেন উনার শারীরিক সমস্যাসমূহ লাঘব হলেও উনার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ (blood glucose level) সাধারণ মাত্রা থেকে কিছুটা বেশি। ডাক্তার পূর্বের ঔষধসমূহ বহাল রেখে ডায়াবেটিসের মাত্রা কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে মিসেস ফারাহ্ নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ করলেও, নিয়মিত ব্যায়াম কিংবা খাদ্যাভ্যাসজনিত ডাক্তারের পরামর্শ সমূহ সম্পূর্ণরূপে পালন করতে পারেন না। ফলশ্রুতিতে উনার শারীরিক কোনো সমস্যা দৃষ্টিগোচর না হলেও রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি বিদ্যমান থাকে।

আরো পড়ুন

– উল্লিখিত চিত্রটি বাংলাদেশের অধিকাংশ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য পরিচিত। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের একটি বড় অংশ আছেন যারা নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ করলেও তাদের ডায়াবেটিস বা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে। এতে প্রাথমিক অবস্থায় তাদের জীবনযাপনে কোনো সমস্যা বা কোনো শারীরিক অসুস্থতা দেখা যায় না বিধায় অনেকেই ব্যাপারটিকে স্বাভাবিকভাবে ধরে নেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে দেখা যেতে পারে কিছু মারাত্মক শারীরিক সমস্যা। এই সমস্যাগুলো থেকে প্রতিকারের জন্য প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান, পরামর্শ এবং একটি নিয়মতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থা।

ডায়াবেটিস (Diabetes) কি এবং কেন হয়

সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের নিয়মিত কিছু পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে হয় যা দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজে ব্যবহৃত হয়। এই পুষ্টি উপাদান গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে শর্করা থেকে প্রাপ্ত গ্লুকোজ বা চিনি- যা দেহের কোষগুলোর প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস ও জ্বালানি  হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একজন মানুষের দৈনিক পুষ্টি চাহিদার একটি বড় অংশ এই গ্লুকোজ, যা বিভিন্ন ধরনের শর্করা জাতীয় খাদ্যসমূহ যেমন চাল, চিনি, আটা, ময়দা, আলু, পাউরুটি, ফলমূল ইত্যাদি থেকে পাওয়া যায়। একজন সুস্থ মানুষের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ খালি পেটে (৮ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে কিছু না খেয়ে থাকলে)  ৮০- ১০০ মি.গ্রা./ ডে.লি. (বা ৪.৪- ৫.৬ মিলিমোল/লি.) এবং খাদ্য গ্রহণের পর ১৭০- ২০০ মি.গ্রা./ ডে.লি. (বা ৯.৪- ১১.১ মিলিমোল/লি.) থাকে। 

খাদ্যে গৃহীত শর্করা পাকস্থলীতে ভেঙে চিনি বা গ্লুকোজে পরিণত হয়, যা রক্তে শোষিত হয়। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যেতে থাকলে তা অগ্নাশয়কে ইনসুলিন নিঃসরণের সংকেত প্রদান করে। ইনসুলিন হলো এক ধরনের হরমোন যা শরীরের কোষগুলোকে গ্লুকোজ গ্রহণ ও ব্যবহার করতে সাহায্য করে। গ্লুকোজের পরিমাণের তারতম্য অনুযায়ী কম বা বেশি পরিমাণে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় (৮০- ২০০ মি.গ্রা./ ডে.লি. বা ৪.৪- ১১.১ মিলিমোল/লি.) রেখে নিয়ন্ত্রন করে।

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। একজন ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ খালি পেটে ১৪০ মি.গ্রা./ ডে.লি. (বা ৭.৮ মিলিমোল/লি.) এবং খাদ্য গ্রহণের পর ২০০ মি.গ্রা./ ডে.লি. (বা ১১.১ মিলিমোল/লি.) বা তার চেয়ে বেশি থাকে।  যদি দেহে  ইনসুলিনের নিঃসরণ কমে যায় বা নিঃসৃত ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে যায়, তখন নিঃসৃত ইনসুলিন রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিস হয়। 

ইনসুলিন এর প্রভাব কমে যাওয়ায় দেহ বিভিন্ন কোষ ও টিস্যুগুলো প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনের জন্য গ্লুকোজ পায়না, তাই প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদা মেটানোর জন্য জন্য দেহের সঞ্চিত চর্বি এবং মাংসপেশি ব্যবহৃত হতে থাকে। সেইসাথে রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকার কারণে রক্তের আয়তন বেড়ে যায় এবং প্রস্রাবের সাথে গ্লুকোজের রেচনও বেড়ে যায়। ফলশ্রুতিতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, তৃষ্ণা পাওয়া, ক্ষুধা লাগা, চামড়া শুকিয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, খুব দ্রুত ওজন কমে যাওয়াসহ আরো বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়।

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা এবং অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস

একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রায় ৮৫ লক্ষ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যা ২০৪৫ সালে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে। অধিকাংশ রোগীই উল্লেখযোগ্য কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা না গেলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন না, ফলে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের একটি বড় অংশ শনাক্তহীন অবস্থায় থেকে যান কিংবা দীর্ঘদিন পর শনাক্ত হোন।

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যার সম্পূর্ণ  প্রতিকার করা যায় না।  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ প্রচলিত থাকলেও শুধুমাত্র ঔষধ দিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। কেবলমাত্র ঔষধ রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমাতে ব্যর্থ হয় এবং এজন্য ঔষধের পাশাপাশি ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাসজনিত পরামর্শসমূহ মেনে চলতে হয়।

কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অধিকাংশ রোগী মনে করেন কেবলমাত্র ঔষধ গ্রহণ করলেই রোগের প্রতিকার হয়ে যাবে। তাই তারা নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করলেও নিজেদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন কিংবা নিয়মিত ব্যায়াম করার প্রতি যত্নশীল হোন না।  ফলশ্রুতিতে ওষুধের প্রভাবে ডায়াবেটিস বা গ্লুকোজের মাত্রা কিছুটা কমলেও ত স্বাভাবিক মাত্রার (খালিপেটে ৮০- ১০০ মি.গ্রা./ ডে.লি. বা ৪.৪- ৫.৬ মিলিমোল/লি. এবং ভরাপেটে ১৭০- ২০০ মি.গ্রা./ ডে.লি. বা ৯.৪- ১১.১ মিলিমোল/লি.) চেয়ে কিছুটা বেশি থাকে। 

প্রাথমিকভাবে রক্তে বাড়তি গ্লুকোজের মাত্রা সাধারণত রোগীর দৈনন্দিন জীবনযাপনে কোনো বড় ধরণের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে না এবং রোগী তুলনামূলক সুস্থ থাকায় বাড়তি গ্লুকোজের মাত্রাকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেন। তাই অধিকাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীই গ্লুকোজের মাত্রা ২০০ মি.গ্রা./ ডে.লি. বা ১১.১ মিলিমোল/লি. এর কম রাখার ব্যাপারে যত্নশীল হোন না।

কিন্তু দেহের সকল শারীরিক প্রক্রিয়াসমূহ একত্রিত হয়ে দেহের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করে, যাতে দেহে সকল ধরণের প্রক্রিয়ার একটি সাম্যাবস্থা সৃষ্টি হয়। ফলে অনিয়ন্ত্রত ডায়াবেটিসে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকায় তা দেহের সাম্যাবস্থাকে নষ্ট করে দেয় এবং দেহের অন্যান্য অঙ্গের উপর এর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সেই সাথে এই বিঘ্নিত সাম্যাবস্থা যদি দীর্ঘদিন বিদ্যমান থাকে, এটি ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সৃষ্টি করে যা পরবর্তীতে মারাত্মক হতে পারে।

ডায়াবেটিসজনিত দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা

ডায়াবেটিসে রক্তে বিদ্যমান অতিরিক্ত গ্লুকোজ রক্তের আয়তন বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে রক্তের আয়তন নিয়ন্ত্রণ এবং অতিরিক্ত গ্লুকোজকে অপসারণের জন্য দেহ থেকে গ্লুকোজের অপসারণও বৃদ্ধি পায়। রক্তের আয়তনের এই পরিবর্তনই মূলত ডায়াবেটিসজনিত অন্যান্য সমস্যাগুলোর সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে বেশকিছু সমস্যা দেখা যেতে পারে:

 ১. হৃদরোগজনিত সমস্যা

অতিরিক্ত গ্লুকোজের উপস্থিতির জন্য রক্তের আয়তন বেড়ে গেলে রক্তনালীর উপর চাপ বৃদ্ধি পায় এবং এতে রক্তনালীর ক্ষতিও হতে পারে। ফলে উচ্চরক্তচাপ, বুকে ব্যথা (angina), হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদির পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায়  রক্তনালীতে ব্লকসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। 

তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপের প্রভাব হৃদপিন্ড, বৃক্ক (kidney), যকৃত (liver)  সহ দেহের অন্যান্য অঙ্গের উপর পড়ে এবং অঙ্গ গুলো কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। 

২. বৃক্ক (কিডনি) জনিত সমস্যা

ডায়বেটিসে আক্রান্ত রোগীর রক্তে বিদ্যমান অতিরিক্ত গ্লুকোজকে শরীর থেকে বের করে দেহে রক্তের আয়তন ঠিক রাখার জন্য বৃক্ককে অতিরিক্ত পরিশ্রম করা লাগে। পাশাপাশি ডায়বেটিসের কারণে সৃষ্ট উচ্চরক্তচাপ বৃক্কের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এতে বৃক্কের ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এর স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বিঘ্নিত করে এবং ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রত ডায়েবেটিস থাকলে তা একসময় বৃক্ককে বিকল করে দিতে পারে। যেহেতু বৃক্ক দেহের বর্জ্য পদার্থ অপসারণে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে, বৃক্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেহে অন্যান্য সমস্যারও সৃষ্টি হয়।

৩. স্নায়ুজনিত সমস্যা

উচ্চরক্তচাপ ও রক্তে উপস্থিত অতিরিক্ত গ্লুকোজ দেহের বিভিন্ন স্নায়ুতে পুষ্টিবহনকারী রক্তনালীকাগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে স্নায়ুগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় এবং অসারতা, অবসতা, জ্বালাভাব, ব্যাথার ইত্যাদির অনুভূতি হয়। বিশেষত দূরবর্তী অঙ্গ যেমন পায়ের আঙ্গুল, হাতের আঙ্গুল ইত্যাদিতে এই সমস্যা বেশি হয়।  যথাসময়ে ক্ষতিগ্রস্থ স্নায়ুর চিকিৎসা না করা হলে অঙ্গটি অনুভূতিহীন হয়ে যেতে পারে।

৪. চোখের সমস্যা

উচ্চরক্তচাপ ও অতিরিক্ত গ্লুকোজ অক্ষিগোলকের ভেতর চাপের সৃষ্টি করে, যা চোখের স্নায়ুসহ অন্যান্য অংশকে নষ্ট করে দেয়। এতে চোখে গ্লুকোমা (স্নায়ু নষ্ট হয়ে যাওয়া), ছানি, রক্তক্ষরণ, অন্ধত্বসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর এজন্য এটি হুমকিস্বরূপ, কারণ সব রোগীই  চোখের সমস্যায় আক্রান্ত হোন এবং নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কেবল একে বিলম্বিত করতে পারে। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হলে সমস্যাটি খুব দ্রুত দেখা যায় এবং দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি খুব বেশি থাকে।

৫. সংক্রমণের বা ইনফেকশনজনিত সমস্যা

ডায়াবেটিস দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়। ফলে বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে দেহের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করতে পারেনা। তাছাড়া ডায়াবেটিদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালিকা ও স্নায়ুতন্ত্র দেহের কোনো আঘাত, কাঁটাছেড়া বা সংক্রমণ নিরাময়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে পারেনা। এর ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়  এবং তা অঙ্গহানীর মত মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা থেকে প্রতিকারের উপায়

ডায়াবেটিস একটি অপ্রতিকারযোগ্য রোগ যা সারা জীবন থাকে এবং এর থেকে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভের কোনো চিকিৎসা বর্তমানে নেই। একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে এর সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হোন। নিয়মিত ঔষধ এর পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামই পারে ডায়াবেটিসজনিত সমস্যাগুলোর প্রকোপ কমিয়ে আনতে। ডায়াবেটিসজনিত দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাগুলো প্রশমিত করার জন্য কিছু পরামর্শ মেনে চলতে হবে, যেমন:

  • আবশ্যিকভাবে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
  • নিয়মিত ঔষধ সেবন করা  
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা (সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট)
  • শর্করা যুক্ত খাবার কম খাওয়া
  • নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া
  • ডায়াবেটিস বা তার সাথে সম্পর্কিত রোগগুলো (উচ্চরক্তচপ, বৃক্কের ক্ষতি ইত্যাদি) বৃদ্ধি করে এমন খাদ্য কম খাওয়া
  • কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার কম খাওয়া 
  • নিয়মিত হাত-পায়ের যত্ন নেওয়া যাতে কোনো ধরনের সংক্রামন না হয় 
  • যেকোনো প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।

উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনের মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ঔষধ গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের ব্যাপারে ডায়াবেটিক রোগীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, ডায়াবেটিস সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে তাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করা এবং সমস্যাগুলো লাঘবের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ মেনে চলার মাধ্যমে একজন ডায়াবেটিক রোগী একটি সুন্দর জীবন উপভোগ করতে পারে।

রেফারেন্স:

  1. Islam RM,  Khan N, Oldroyd JC et al. Prevalence of diabetes and prediabetes among Bangladeshi adults and associated factors: Evidence from the Demographic and Health Survey, 2017-18. medRxiv. Jan 2021. Available from here.
  2. Watson S. Everything You Need to Know About Diabetes. Health line. Feb 2020. Available from here
  3. Diabetes- long term effects. Better Health Channel. Available from here.
  4. Diabetesayo clinic. Oct 2020. Available from here
  5. Diabetes-what is diabetes? Centers for Disease Control and Prevention. Dec 2021. Available from here

আমি ফারজানা ইয়াসমিন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের একজন শিক্ষার্থী। "নিজের চিন্তাধারাকে প্রকাশের জন্য লেখনী হতে পারে একটি শক্তিশালী মাধ্যম"- এই অনুভূতি থেকে লেখালেখির প্রতি আগ্রহী হই।
ফার্মাসি বা ঔষধবিদ্যা সম্পর্কে অধ্যয়নের ফলে মানবদেহের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা, রোগ-ব্যাধি, বিভিন্ন ঔষধ ও ঔষধের ব্যবহার সম্পর্কে অনেক তথ্যের সংস্পর্শে আসি এবং লেখালেখির মাধ্যমে সেগুলো সম্পর্কে নিজের ক্ষুদ্র জ্ঞানকে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ছড়িয়ে দিতে অনুপ্রাণিত হই।

1 Comment

একটি প্রত্যুত্তর করুন

Your email address will not be published.