ঘুমের ঔষধ সম্পর্কে
/

ঘুমের ঔষধ সম্পর্কে কি জানতে চান – Straight Facts on Sleep Aids

340 বার পড়া হয়েছে

প্রেসক্রিপশন স্লিপ এইডস এন্ড স্টিমুলেন্টস (Prescription Sleep Aids and Stimulants)

সাময়িক অনিদ্রা সমস্যায় ওভার-দ্য-কাউন্টার স্লিপ এইডস সাধারণত লঘু মাত্রার হয়ে থাকে, তবে দীর্ঘকালীন অনিদ্রার সমস্যা যদি ব্যক্তির দৈনিক কার্যক্রম কে ব্যাহত করে তখন চিকিৎসকের পরামর্শে আরও শক্তিশালী ঘুমের ঔষধের প্রয়োজন হয়, যাকে প্রেসক্রিপশন স্লিপ এইডস (Prescription Sleep Aids) বলে। প্রেসক্রিপশন স্লিপ এইডস, যার অপর নাম হিপনোটিক্স (Hypnotics), মূলত রোগীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে। এই ধরনের ঔষধ গুলোর শ্রেণীবিভাগে অন্যতম হলো বেঞ্জোডায়াজেপিনস্ (Benzodiazepines), বারবিচিউরেটস্ (Barbiturates) ইত্যাদি।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যেমন নারকোলেপসিতে দীর্ঘক্ষণ সজাগ থাকা রোগীর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে, এমতাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উদ্দীপনা বর্ধক ঔষধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে যাকে প্রেসক্রিপশন স্টিমুলেন্টস (Prescription Stimulants) বলে।

প্রেসক্রিপশন স্লিপ এইডস মানেই হল ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন/ ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এইসব ঘুমের ওষুধ ক্রয়/ বিক্রয় বা সেবন করা যাবে না। ভুলেও ডাক্তার দেখানো ছাড়া নিজে এইসব ওষুধ সেবন করবেন না।

বারবিচিউরেটস্ (Barbiturates)

বারবিচিউরেটস্ জাতীয় ঔষধ সাধারণত নন-রেম (Non-REM) ঘুমের উদ্রেক করে এবং রেম (REM) ঘুমের পরিমাণ কমিয়ে দেয় ফলে হঠাৎ বারবিচিউরেটস্ সেবন বন্ধ করে দিলে রোগীর রেম ঘুমের তীব্র প্রতিঘাতের স্বীকার হন যাকে ‘রেম রিবাউন্ড’ (REM Rebound) বলে। এমন ঘুম রোগীকে দুঃস্বপ্নের দিকে ধাবিত করে। বারবিচিউরেটস্ এর অন্যতম অবাঞ্ছিত কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলো আসক্তি, সহনশীলতা, স্বাভাবিকের চেয়ে ধীর নিশ্বাস-প্রশ্বাস ইত্যাদি। বারবিচিউরেটস্ উচ্চমাত্রায় সেবনে মারাত্মক ক্ষতি ঘটতে পারে। তাই অনিদ্রার সমস্যায় বারবিচিউরেটস্ এর ব্যবহার বর্তমানে নেই বললেই চলে।

বেঞ্জোডায়াজেপিনস্ (Benzodiazepines)

১৯৬০-৭০ এর দশকে বিজ্ঞানীগণ বেঞ্জোডায়াজেপিনস্ নামে নতুন এক শ্রেণীর নিদ্রা সহায়ক ঔষধ তৈরি করেন যা তুলনামূলকভাবে বারবিচিউরেটস এর চেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকরী। গঠনগত ও হাফ-লাইফ এর ভিন্নতার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের বেঞ্জোডায়াজেপিনস্ শ্রেণীর ঔষধের ব্যবহার রয়েছে।

সেবনকৃত ঔষধের অর্ধেক পরিমাণ বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর থেকে নিস্কৃত হতে যে সময় লাগে তাকেই বলে ওই ওষুধের হাফ লাইফ (Half-life) বা অর্ধজীবন। রোগীর প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে কোন বেঞ্জোডায়াজেপিন শ্রেণীর ঔষধটি চিকিৎসকের সুপারিশ প্রাপ্ত হবে তা নির্ভর করে ঔষধের হাফ লাইফের উপর। ঔষধের হাফ-লাইফ যদি দীর্ঘ হয় তবে তা উদ্বেগ চিকিৎসায় কিংবা প্রতিবন্ধকতাহীন নৈশনিদ্রায় ভালো কাজ করে। অপরদিকে ঔষধের হাফ-লাইফ যদি ছোট (১-২ ঘন্টা) হয়, তবে তা রোগীকে স্বল্প সময়ে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে।

বেঞ্জোডায়াজেপিনস্, বারবিচিউরেটস্ এর ন্যায় অতিমাত্রায় সহনশীলতা, রেম ঘুম দমন কিংবা উচ্চমাত্রার সমস্যা সৃষ্টি না করলেও এটির কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন- দীর্ঘসময় কার্যকরী বেঞ্জোডায়াজেপিনস্ দিনের বেলায় তন্দ্রা, অস্বস্তি ও দুর্বলতা তৈরি করতে পারে। বেঞ্জোডায়াজেপিনস্ স্লিপ এপনিয়া সমস্যাকে বৃদ্ধি করে। এর সেবন বন্ধ করে দিলে রোগী উল্লেখযোগ্যভাবে অনিদ্রার স্বীকার হতে পারেন। বেঞ্জোডায়াজেপিনস্ এর দীর্ঘকালীন (৪ সপ্তাহের বেশি) ব্যবহারে নির্ভরশীলতা বা আসক্তি তৈরি হয়। বেঞ্জোডায়াজেপিনস্ ও অ্যালকোহল সমসাময়িক সময়ে গ্রহণ করলে রোগী প্রচন্ড, অপ্রতিরোধ্য নিদ্রায় আক্রান্ত হতে পারেন।

সম্প্রতি, এমন কিছু ঔষধ আবিষ্কৃত হয়েছে যাদের রাসায়নিক গঠন বেঞ্জোডায়াজেপিনস্ এর চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। এগুলো অন্যান্য প্রেসক্রিপশন স্লিপ এইডের তুলনায় বেশ নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত। কারণ এদের হাফ-লাইফ ছোট হওয়ার দরুন এগুলো তন্দ্রা বা অস্বস্তিও তৈরি করে না এবং বারবিচিউরেটস্ এর মত রেম ঘুম দমন ও সহনশীলতা, আসক্তি কিংবা “ঊইথড্রয়াল সিনড্রোম” (Withdrawal Syndrome) ও উদ্রেক করে না। যার কারণে বর্তমানে এই ঔষধ গুলো প্রেসক্রিপশন স্লিপ এইড হিসেবে ডাক্তারের পরামর্শে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে জোলপিডেম (Zolpidem) ও জ্যালেপ্লোন (Zaleplon) নিদ্রা উদ্রেকজনিত সমস্যায় এবং জোপিক্লোন (Zopiclone) ও এসজোপিক্লোন (Eszopiclone) দীর্ঘক্ষণ ঘুমিয়ে থাকতে না পারার সমস্যায় ব্যবহৃত হয়। তবে এ সকল ঔষধ স্লিপ এপনিয়ার  সমস্যাকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং অ্যালকোহলের সাথে মারাত্মক মিথস্ক্রিয়াও ঘটাতে পারে।

প্রেসক্রিপশন স্টিমুলেন্টস (Prescription Stimulants)

নারকোলেপসির মতো অনিদ্রার সমস্যায় রোগীকে সজাগ রাখতে উদ্দীপক কিংবা স্টিমুলেন্টস জাতীয় ঔষধের দরকার হয়। স্টিমুলেন্টস স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম কে বৃদ্ধি করে এবং সচেতনতা, মনোযোগ ও কর্মশক্তি বর্ধন করে। প্রেসক্রিপশন স্টিমুলেন্টস এর মধ্যে অন্যতম হলো মিথাইলফেনিডেট (Methylphenidate), পেমোলিন (Pemoline), ডেক্সট্রোএমফিটামিন (Dextroamphetamine), মোডাফিনিল (Modafinil) ইত্যাদি। তবে প্রেসক্রিপশন স্টিমুলেন্টস তীব্র আসক্তি তৈরি করতে পারে এবং বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ, শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত ব্যাধি, বিভ্রান্তি, শত্রুমনোভাব, খিঁচুনি, বিপজ্জনক হারে উচ্চ তাপমাত্রা এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে।

নিদ্রায় প্রভাব বিস্তারকারী অন্যান্য ঔষধ সমূহ (Other Drugs and Medications)

অনিদ্রা ও অতি নিদ্রায় ব্যবহৃত ঔষধ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাধি যেমন- অ্যালার্জি, উচ্চ রক্তচাপ, মৃগী, স্থূলতা, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাথা, মানসিক রোগ যেমন সিজোফ্রেনিয়া, বিষণ্ণতা এবং মাদক হিসেবে বহুল ব্যবহৃত অ্যালকোহল, নিকোটিন এবং কোকেনের সেবন ঘুমের ছন্দকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এদের মধ্যে অন্যতম কিছু ঔষধের ঘুমের উপর প্রভাব নিম্নে আলোচিত হলো।

অ্যান্টিহিস্টামিন (Antihistamine)

বিভিন্ন অ্যালার্জি জনিত সমস্যায় সেবনকৃত অ্যান্টিহিস্টামিন, নিদ্রা জনিত সমস্যায় ব্যবহৃত ওটিসি অ্যান্টিহিস্টামিন এর মতোই ঝিমুনিভাবের উদ্রেক করতে পারে। তাই, গাড়ি চালানো কিংবা বিপজ্জনক মেশিনপত্র চালানোর পূর্বে অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন পরিহার করা উচিত।

ওজন-হ্রাসে ব্যবহৃত ঔষধ (Weight-loss Drugs)

ওজন-হ্রাসে ব্যবহৃত ঔষধ গুলো কার্যত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপনা যোগায়। ফেনটার্মিন ও মেজিনডোল জাতীয় উদ্দীপকগুলো ক্ষুধার দমন করে ও জাগরণকে উদ্দীপিত করে যার ফলে ওজন-হৃাসের ঔষধ সেবনকারী প্রায়শই অনিদ্রার সমস্যায় ভোগেন।

এই আর্টিকেলের কিছু অংশ শুধুমাত্র মেডিকেল বা স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত পড়ালেখায় নিয়োজিত শিক্ষার্থীদের জন্য। পেশেন্টগণ এই আর্টিকেল থেকে শিক্ষা নিতে পারবেন কিন্তু ট্রিটমেন্ট শুরু করার আগে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঔষধ (High Blood Pressure and Heart Medications)

উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ও বুক ব্যথা চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ সমূহের মধ্যে অন্যতম হলো প্রোপ্রানোলোল (Propranolol), অ্যাটেনোলোল (Atenolol), এসিবিউটোলোল (Acebutolol), কার্ভেডিলোল (Carvedilol) ইত্যাদি, যা বিটা অ্যাড্রেনার্জিক রিসেপ্টর (Beta-Adrenergic Receptor) কে বন্ধ করে দেয়। ধারণা করা হয়, মস্তিষ্কের বিটা অ্যাড্রেনার্জিক রিসেপ্টর কে বন্ধ করার দরুন রোগী নিদ্রা জনিত সমস্যা যেমন ঝিমুনি, বারবার ঘুম ভাঙ্গা, দুঃস্বপ্ন জাতীয় সমস্যা ইত্যাদিতে ভোগেন।

মৃগী রোগের ঔষধ (Epilepsy Medications)

মৃগী রোগে ব্যবহৃত ঔষধ সমূহ যেমন ফেনাইটোয়িন (Phenytoin), ভেলপ্রোয়েট (Valproate), টোপিরামেট (Topiramate), কার্বামাজেপিন (Carbamazepine) ইত্যাদি স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা কে হৃাস করে যা তন্দ্রাভাব বা ঝিমুনির উদ্রেক করে।

অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস্ (Antidepressants)

বিষণ্ণতা বিভিন্ন নিদ্রা জনিত সমস্যা যেমন ঘুম না আসা, বারবার ঘুম ভাঙ্গা, প্রাতঃকালীন নিদ্রাভঙ্গ ইত্যাদি সমস্যা কে ত্বরান্বিত করে। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস্ যেমন ফ্লুয়োক্সেটিন (Fluoxetine), পারোক্সেটিন (Paroxetine), ফ্লুভোক্সামিন (Fluvoxamine) ইত্যাদি এ জাতীয় ঘুমের সমস্যায় স্বস্তি দেয়।

তবে এ জাতীয় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস্ এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে যেমন- তন্দ্রাচ্ছন্নতা, র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট বিহ্যাভিয়ার ডিসঅর্ডার (REM Behaviour Disorder) এর লক্ষণ যেমন স্বপ্নাদিষ্ট হওয়া ইত্যাদি। তবে এসব কারনে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস্ সেবন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ না করে মডারেট অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস্ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।

সিজোফ্রেনিয়ার ঔষধ (Medications for Schizophrenia)

সিজোফ্রেনিয়ায় ব্যবহৃত অ্যান্টিসাইকোটিক (Antipsychotic) বা নিউরোলেপটিক (Neuroleptic) শ্রেণীর ঔষধ যেমন হ্যালোপেরিডল (Haloperidol), রিসপেরিডন (Risperidon), ক্লোজাপিন (Clozapine), কুইটিয়াপিন (Quetiapine) ইত্যাদি নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামিনের (Dopamine) কার্যকারিতা হ্রাস করে যা তন্দ্রাভাব বা ঝিমুনিকে বর্ধিত করে।

ব্যথানাশক ঔষধ (Pain Medications)

শক্তিশালী ব্যথানাশক ঔষধ অর্থাৎ যে সকল ঔষধ ব্যবহারে চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন হয় যেমন অপিয়েট (Opiate) শ্রেণীর মরফিন (Morphine) বা ডেমেরোল (Demerol) ইত্যাদি তন্দ্রাচ্ছন্নতাকে উদ্দীপ্ত করে। তবে এরা রেম ঘুমের পরিমাণকে কমিয়ে দেয় ফলে ঔষধ সেবন বন্ধ করে দিলে ‘রেম রিবাউন্ড’ (REM Rebound) এর সমস্যা দেখা দেয়। পাশাপাশি, অপিয়েট ব্যথানাশক স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসকে বাধাগ্রস্থ করে যা স্লিপ এপনিয়ার সমস্যাকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যায়।

অ্যালকোহল, নিকোটিন ও অন্যান্য আসক্তি সৃষ্টিকারী ঔষধ (Alcohol, Nicotine and other addictive drugs)

অধিক মাত্রায় অ্যালকোহল (Alcohol) পান ঝিমুনি ও দ্রুত নিদ্রাচ্ছন্ন হওয়াকে ত্বরান্বিত করে। তবে এক্ষেত্রে স্বাভাবিক ঘুমের ছন্দপতন হয় এবং মদ্যপ ব্যক্তি ঘুম ও জাগরণের মধ্য দিয়ে যায়। এছাড়াও অ্যালকোহল স্লিপ এপনিয়ার সমস্যাকে তীব্র করে ও হঠাৎ পান বন্ধ করে দিলে ‘রেম রিবাউন্ড’ এর সমস্যা দেখা দেয়।

নিকোটিন (Nicotine), যা তামাকের অন্যতম প্রধান উপাদান, তীব্রভাবে ঘুমকে প্রভাবিত না করলেও, ধূমপান ত্যাগের ক্ষেত্রে এটি বিভিন্ন প্রত্যাহার জনিত লক্ষণ যেমন অনিদ্রা, অস্থিরতা ও বিরক্তির উদ্রেক করতে পারে।

কোকেন (Cocaine), এম্ফিটামিন (Amphetamine), এমডিএমএ (MDMA, Ecstasy), মিথাম্ফিটামিন (Methamphetamine) জাতীয় শক্তিশালী অবৈধ উদ্দীপক সমূহ জাগরণ ও চেতনাকে উদ্দীপিত করে, ফলে এদের সেবন বন্ধ করার সাথে সাথে ব্যক্তি দীর্ঘ সময় নিদ্রাবস্থায় চলে যায় এবং বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়।

মারিজুয়ানার (Marijuana) অন্যতম প্রধান উপাদান ডেলটা-৯-টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনোল (Delta-9-Tetrahydrocannabinol, THC) রেম ঘুমের পরিমাণ হ্রাস করে, ফলে মারিজুয়ানার ধূম্রপান বন্ধে ‘রেম রিবাউন্ড’ সমস্যা দেখা দেয়।

রাতে ভালো ঘুম পেতে করনীয় (Tips for getting a good night’s sleep)

ড্রাগস্ দ্য স্ট্রেইট ফ্যাক্টস্ সিরিজের স্লিপ এইড বইটি অত্যন্ত সহজ সাবলীল ভাষায় নিদ্রাজনিত নানান ব্যাধি ও নিদ্রা সহায়ক ঔষধ ব্যবহারের নানান সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করেছে। এই বইতে এমন কতগুলো পন্থা বা টিপস্ (Tips for getting a good night’s sleep) এর উল্লেখ রয়েছে যেগুলো একটি আরামদায়ক, শান্তিপূর্ণ, নৈশনিদ্রা নিশ্চিত করণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। পন্থাগুলো হলো: 

  • অপরাহ্নে কিংবা সন্ধ্যের পর ধূমপান, মদ্যপান কিংবা ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় পান পরিহার করা।
  • দিনের বেলা ঘুম পরিহার করা।
  • নিয়মিত শরীর চর্চা করা, তবে তা অবশ্যই ঘুমানোর ২-৩ ঘণ্টা পূর্বেই সম্পন্ন করা।
  • দৈনিক একটি নির্দিষ্ট সময় শুতে যাওয়া।
  • ঘুমানোর ১-৩ ঘন্টা আগে থেকেই অত্যধিক আলোর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা।
  • ঘুমানো ব্যতীত অন্যান্য উদ্দীপনা মূলক কাজ যেমন পড়ালেখা করা, কম্পিউটার গেম খেলা ইত্যাদি বিছানায় বসে না করা।
  • শুতে যাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে ঘুম না আসলে উঠে পড়া ও স্নায়ু শিথিল কারী যে কোন কাজ যেমন গল্পের বই পড়া কিংবা গান শোনা জাতীয় কাজে লিপ্ত হওয়া এবং ঘুমের উদ্রেক হলে বিছানায় ফিরে যাওয়া।
  • বিছানায় শুয়ে যেকোনো জটিল চিন্তা থেকে মনকে দূরে রাখা, কারণ সর্বোত্তম জিনিস যা একটি শান্তিপূর্ণ ও আরামদায়ক নিদ্রা নিশ্চিত করতে পারে তা হল একটি ঝামেলা-মুক্ত মন।

নিদ্রা মানবদেহের একটি শারীরিকবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যা সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অনিদ্রা বা নিদ্রাজনিত নানান ব্যাধি জীবনের স্বাভাবিক ছন্দপতনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তাই, একটি আরামদায়ক, শান্তিপূর্ণ, নৈশনিদ্রা নিশ্চিত করতে সকলের সচেষ্ট হওয়া উচিত তবে ঘুমের ওষুধ ব্যবহারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে কারণ অনিয়ন্ত্রিত ঘুমের ওষুধের ব্যবহারে মারাত্মক ক্ষতি ও রয়েছে।

নোটঃ প্রবন্ধটি এম. ফস্টার অলিভ রচিত চেলসি হাউস পাব থেকে ২০০৫ সালে প্রকাশিত ড্রাগস্ দ্য স্ট্রেইট ফ্যাক্টস্ সিরিজের স্লিপ এইডস বইটি অবলম্বনে সংকলিত। এই বইটি মানব জীবনে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা, নিদ্রা সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যাধি বা জটিলতা ও নিদ্রা সহায়ক বা নিদ্রা উদ্রেককারী বিভিন্ন ঔষধ যেমন ওভার-দ্য-কাউন্টার স্লিপ এইডস, মেলাটোনিন, ওভার-দ্য-কাউন্টার স্টিমুলেন্টস, প্রেসক্রিপশন স্লিপ এইডস এন্ড স্টিমুলেন্টস এবং আরো কিছু সহায়ক ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। বইটি নিদ্রা সম্পর্কিত নানান জটিলতা ও সে ক্ষেত্রে করণীয় বিষয়ক তথ্যগুলিকে সহজ ভাষায় সাধারণ মানুষের জন্য উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে। এই নিবন্ধে বইটিতে আলোচিত নিদ্রা সম্পর্কিত নানাবিধ জটিলতা ও তাদের প্রতিকার নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে।

আমি জান্নাতুল ফেরদৌস, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে স্নাতকোত্তর কোর্সে অধ্যয়নরত আছি। ফার্মেসি বিভাগে অধ্যয়নের সুবাদে ঔষধ সম্পর্কে অর্জিত সামান্য জ্ঞান আমাকে বুঝতে শিখিয়েছে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঔষধের সঠিক ব্যবহার কতটা প্রয়োজনীয় এবং এর অনিরাপদ ও অনিয়ন্ত্রিত সেবন কিভাবে দিন দিন আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে চলেছে। তাই, জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষালব্ধ এই স্বল্প জ্ঞানকে আমি আমার লেখার মাধ্যমে সাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। এবং প্রত্যাশা করি ভবিষ্যতে গবেষণামূলক বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে আমি ঔষধ স্বাস্ত্র্যকে আরো সমৃদ্ধ করতে সচেষ্ট হব।

একটি প্রত্যুত্তর করুন

Your email address will not be published.