Gender difference affects drug action
/

মানবদেহে ওষুধের প্রভাব কি পুরুষ – মহিলাতে ভিন্ন দেখায়?

411 বার পড়া হয়েছে

পুরুষ এবং মহিলাদের মাঝে শারীরবৃত্তীয় পার্থক্য, কোন একটি ওষুধের ফার্মাকোকাইনেটিক্স (Pharmacokinetics) এবং ফার্মাকোডাইনামিক্স (Pharmacodynamics) সহ ওষুধের সকল কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে থাকে। সাধারন অন্যান্য প্রভাব ছাড়াও, শরীরের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতে লিঙ্গ (Gender) একটা বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে থাকে।

কিন্তু এ ফার্মাকোকাইনেটিক্স বলতে আসলে কি বুঝায়?

ফার্মাকোকাইনেটিক্স বলতে সাধারনত, কোন একটি নির্দিষ্ট ওষুধ এর শোষন (Absorption), সারা শরীরে বিতরণ (Distribution), বিপাক (Metabolism), আর নিঃসরন (Excretion) কে বুঝিয়ে থাকে। পুরুষ, মহিলা ভেদে এ প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন হয়।

নিম্নে ফার্মাকোকাইনেটিক্স এর উপর লিঙ্গভেদে যে ভিন্ন প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তা দেখানো হলো:

ওষুধের শোষণ (Absorption): 

  • শোষনের ক্ষেত্রে একটি সুপরিচিত উদাহরণ হলো, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে দ্রুত অ্যালকোহল শোষণ হয়ে থাকে। কারন, অ্যালকোহল অক্সিডেশনের জন্য দায়ী প্রধান এনজাইম, “অ্যালকোহল ডিহাইড্রোজেনেস” পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে কম সক্রিয় হয়। অতএব, মহিলাদের মাঝে অ্যালকোহল দ্রুত শোষিত হবে। এ কারনে, পুরুষদের তুলনায় মহিলারা অ্যালকোহলের তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের জন্য বেশী সংবেদনশীল। এ কারনে পুরুষের তুলনায় কম এলকোহলের গ্রহন ও, মহিলাদের মাঝে বেশী সংবেদনশীলতা দিয়ে থাকে।
  • গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (GI) ট্রানজিট হার, রক্তরসের ঘনত্ব, সাধারনত মৌখিকভাবে গ্রহন করা ওষুধের শোষণকে প্রভাবিত করতে পারে। যেহেতু মহিলাদের গ্যাস্ট্রিক গতিশীলতা ও অন্ত্রের ট্রানজিট পুরুষদের তুলনায় ধীর হয়ে থাকে, তাই যে সকল ওষুধের সেবন খাবারের আগে করতে হয়, সেসকল ওষুধ এর ক্ষেত্রে বেশী সময় অপেক্ষা করতে হবে মহিলাদের। এর উদাহন হলো: খালি পেটে গ্রহন করা ক্যাপ্টোপ্রিল (captopril), ফেলোডিপাইন (felodipine), অ্যাম্পিসিলিন (ampicillin), ডেমেক্লোসাইক্লিন (demeclocycline) এবং লোরাটাডিন (loratadine) জাতীয় ওষুধ। 
  • মহিলাদের ক্ষেত্রে PGP-(P-Glycoprotein)-এর নিম্ন কার্যকারিতা এবং এর কারনে পরবর্তীতে ডিজক্সিনের (digoxin) এর উচ্চতর প্লাজমা ঘনত্ব, হৃদরোগে আক্রান্ত মহিলা রোগীদের মধ্যে ডিজক্সিন চিকিৎসা থেকে উচ্চ মৃত্যুর হারের সম্ভবনাকে বৃদ্ধি করতে পারে। মহিলাদের মধ্যে হরমোনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিও এই ধরনের উচ্চ ঝুঁকির দিকে নিয়ে যেতে পারে, কারণ প্রোজেস্টেরন PGP কে বাধা দিতে পারে এবং এইভাবে ডিজক্সিনের নিঃসরণ হ্রাস করতে পারে।

ওষুধ বিন্যাস (Distribution): 

  • পুরুষদের তুলনায়, মহিলাদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি। আবার অন্যদিকে মহিলাদের শরীরে পানির পরিমাণ কম পুরুষের তুলনায়। আর এ কারনে এটি নির্দিষ্ট ওষুধের ভলিউম অফ ডিস্ট্রিবিউশনের পরিমাণকে (Vd) প্রভাবিত করতে পারে। Opioids এবং Benzodiazepines মতো লিপোফিলিক ওষুধের ক্ষেত্রে, মহিলাদের মধ্যে Vd সাধারণত বেশি হয়। শরীরের চর্বি জমা হওয়ার ফলে, যা একটি জলাধার হিসাবে কাজ করে, এই লিপোফিলিক ওষুধের অর্ধ-জীবন(T1/2) মহিলাদের মধ্যে বেশী হয়। এ কারনে, দীর্ঘস্থায়ী ডোজ, ওষুধের বিষাক্ততার প্রভাবসহ ফ্যাটি টিস্যুতে এ ওষুধ গুলোর সঞ্চয় আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। 
  • এ সকল কারনে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের জন্য “বেনজোডিয়াজেপাইন” এর কম ডোজ দেয়া যৌক্তিক। যেহেতু মহিলাদের মধ্যে বয়সের সাথে শরীরের চর্বি অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে, তাই লিপোফিলিক ওষুধ বিতরণে লিঙ্গ-নির্ভর এর যে বৈষম্যেতা, তা বয়সের সাথে সাথে বাড়তে পারে। 

বিপাক (মেটাবলিজম): 

কোন একটি ওষুধ গ্রহন করার পর শরীর দ্ধারা তার মেটাবলিজম সংঘটিত হয়ে থাকে। এ কাজটি মূলত করে থাকে, শরীরের যকৃৎ (লিভার)। মূলত মেটাবলিজম এর প্রধান অঙ্গানু হিসেবে এ যকৃৎ কেই চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এ মেটাবলিজম কিভাবে সংঘটিত হয়ে থাকে?

সাধারনত নির্দিষ্ট কিছু এনজাইম এ কাজে প্রভাবিত করে থাকে। এদের উপস্থিতি, মাত্রা, ওষুধের উপর এর প্রভাব করার ক্ষমতা ইত্যাদি লিঙ্গ ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। 

মেটাবলিজের আবার ভিন্ন ধাপ রয়েছে। এ মেটাবলিজম সাধারনত দুধাপে সংঘটিত হয়ে থাকে। যেমনঃ প্রথম পর্যায় ও দ্বিতীয় পর্যায়। আর এ দুপর্যায়ে কাজ করার জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রকমের এনজাইম। নিম্নে এ ধরনের এনজাইম সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলো।

প্রথম পর্যায় এনজাইম (Enzymes involved in the phase I metabolism): 

  • CYP450 এনজাইম প্রায় ৭০% থেকে ৮০% ওষুধ বিপাক করার জন্য দায়ী হয়ে থাকে। এ পর্যন্ত মোট ১৮টি CYP জিন চিহ্নিত করা হয়েছে, আর এ ১৮টির মাঝে বেশিরভাগ ওষুধের বিপাক ক্রিয়া সাধারনত CYP1, CYP2 এবং CYP3 দ্বারা হয়ে থাকে। 
  • CYP1A2 এনজাইমটি সাধারনত, অ্যান্টিসাইকোটিক (Antipsychotic) ওষুধ যেমন: Olanzapine এবং Clozapine এর বিপাক ঘটিয়ে থাকে। এ এনজাইমের কার্যকারিতা পুরুষদের মধ্যে বেশী দেখা যায়, মহিলাদের তুলনায়। অতএব, মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে এই অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধের ক্লিয়ারেন্স কিছুটা দ্রুত হয়, যেহেতু মেটাবলিজম বেশী হচ্ছে। অন্যদিকে, মহিলারা এই ওষুধগুলির ধীরে বিপাকের কারণে কিছু সাইকোটিক (মানসিক) সিম্পটস প্রকাশ করে এবং ওষুধের সাথে যুক্ত আরও বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় যেমন, ওজন বৃদ্ধি, বিপাকীয় সিন্ড্রোম ইত্যাদি।
  • সেক্স হরমোনগুলি গর্ভাবস্থায় CYP1A2 এনজাইমের কার্যকলাপ কিছুটা হ্রাস করে থাকে৷ আবার এর কার্যকারিতা, গর্ভনিরোধক ওষুধ গ্রহন করার ফলেও কমে যেতে পারে। তাই এ ধরনের অবস্থায় “Olanzapine” ও “Clozapine” এসকল ওষুধ এর ডোজ সামঞ্জস্য করে এ সমস্যা সমধান করা যেতে পারে। 
  • CYP2B6 এর কার্যকলাপ পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে। অতএব, CYP2B6 দ্বারা প্রাথমিকভাবে বিপাককৃত ওষুধগুলি পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মাঝে কম কার্যকর হয়, যেহেতু মেটাবলিজমের যে হার তা মহিলাদের মাঝে বেশী এক্ষেত্রে।
  • অন্যদিকে, CYP2D6, যা 20% এর ও বেশী নির্ধারিত ওষুধ যেমন ব্যথানাশক (Codeine), এন্টিডিপ্রেসেন্টস (সিলেক্টিভ সেরোটোনিন রিউপটেক ইনহিবিটর [SSRIs]), এবং  Haloperidol এর ব্যাপক জেনেটিক পলি-মর্ফিজম প্রদর্শন করে থাকে। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে CYP2D6 সক্রিয়তা বেশি এবং এর প্রকাশ (প্রোটিন এবং mRNA) এবং কার্যকলাপ পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশী।
  • আবার Zolpidem, Cyclosporin, Erythromycin, Nimodipine এবং Cortisol মতো ওষুধগুলি হলো CYP3A4 এর সাবস্ট্রেট, যা মহিলাদের মধ্যে দ্রুত ক্লিয়ারেন্স দেখায়। 
  • টেস্টোস্টেরন নির্দিষ্ট ওষুধের বিপাক করার ক্ষেত্রে CYP3A-এর কার্যকলাপকে উদ্দীপিত করতে পারে এবং এ কারনে পুরুষদের মধ্যে জোলপিডেম (Zolpidem) এর বিপাক বেশী পরিমানে হয়ে থাকে মহিলাদের তুলনায়। বিপরীতে, মহিলাদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের উপস্থিতি কম থাকার কারণে “Zolpidem” CYP3A4-দ্ধারা সংঘটিত বিপাক ধীরগতির হতে পারে, যার ফলে ক্লিয়ারেন্স ধীর হয়ে যায়। তাই এক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া টাও বেশী দেখা দিতে পারে মহিলাদের ক্ষেত্রে।

দ্বিতীয় পর্যায় এনজাইম: 

  • প্রধান ২য় পর্যায় এর এনজাইমগুলো বিভিন্ন বিক্রিয়া যেমন: Glucuronidation, Sulfate-conjugation, N-acetylation, and Methylation এর জন্য দায়ী হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ২য় পর্যায়ের এনজাইমগুলির ক্রিয়াকলাপ মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। 
  • গবেষনায় HIV সংক্রামিত রোগীদের মধ্যে, অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধের কার্যকারিতা মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশী দেখা গেছে। আবার পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের “Acetaminophen” ক্লিয়ারেন্স ও গবেষনায় কম দেখা গেছে। 

ওষুধ নির্গমন (Excretion):

  • শরীরের বর্জ্য নিঃসরন এর যে কাজ তা মূলত কিডনী করে থাকে। আরো কিছু অঙ্গানু এক্ষেত্রে জড়িত হলেও, কিডনীর ভূমিকা এখানে মূখ্য। কিডনীর এ কাজের জন্য, কিডনীতে রক্তের প্রভাব জরুরী। কারন এ রক্ত ই প্রতি সেকেন্ডে ফিলট্রেট হচ্ছে, কিডনী দ্ধারা।
  • কিডনীতে রক্ত ​​প্রবাহের যে হার, তা পুরুষে কিছুটা বেশী হয়ে থাকে, মহিলাদের তুলনায়। আর এ কারনেই গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেশন রেট (glomerular filtration rate – GFR) মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে। তাই, মহিলাদের কিডনির মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে ওষুধের নির্মূল বা নির্গমন কিছুটা ধীরগতিতে হয়। যেমনঃ ডিজক্সিন, মেথোট্রেক্সেট, গ্যাবাপেন্টিন এবং প্রিগাবালিন এর নিঃসরন।

সূত্রসমূহঃ

  • Chu T. Gender differences in pharmacokinetics. US Pharm. 2014 Sep;39(9):40-3.
  • Mazure CM, Jones DP. Twenty years and still counting: including women as participants and studying sex and gender in biomedical research. BMC women’s health. 2015 Dec;15(1):1-6.

আমি আবেদিন সোহাগ। আমি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, ফার্মেসী বিভাগে ৫ম বর্ষে পড়াশোনা করছি। আমার স্থায়ী ঠিকানা চট্টগ্রাম।
পড়াশোনার পাশাপাশি ওয়েব কনটেন্ট আর ওয়েবসাইট নিয়ে সবসময়ই আগ্রহ কাজ করত এবং সেখান থেকেই কাজ করেছি ওয়ার্ডপ্রেস, পাইথন, জাভা স্ক্রিপ্ট (ভ্যানিলা) ইত্যাদি নিয়ে। নতুনত্বে বিশ্বাসী - তাই নতুনকে খুঁজে চলেছি নিরন্তর!

1 Comment

একটি প্রত্যুত্তর করুন

Your email address will not be published.