মানসিকভাবে সুস্থ থাকার ৫ কৌশল

মানসিকভাবে সুস্থ থাকার শীর্ষ ৫ কৌশল

547 বার পড়া হয়েছে

মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে অর্থাৎ মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা উন্নত করতে আপনি নিচের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ অনুসরণ করতে পারেন, যা আপনাকে আরও উন্নত ও ইতিবাচক জীবন লাভ করতে এবং জীবনকে সর্বাধিক উপভোগ করতে সহায়তা করবে।

. অন্যদের সাথে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ স্থাপন করুন

একটি ভালো সম্পর্ক আপনার মানসিক সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা নিজেকে স্ব-মূল্যবোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে, যা আপনাকে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা শেয়ার করার সুযোগ করে দেয়, মানসিক সমর্থন যোগায় এবং আপনাকে অন্যদের সমর্থন পাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

সুন্দর, নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে আপনি অনেক কিছু করতে পারেন।

যা করবেন

  • প্রতিদিন আপনার পরিবারের সাথে কাটানোর জন্য সময় নিন। উদাহরণস্বরূপ, একসাথে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বের করার চেষ্টা করুন।
  • বন্ধুদের সাথে একটি দিনের আয়োজন করুন, যা হয়তো অনেকদিন ধরে আপনি পারছেননা।
  • আপনার ছেলে-মেয়ে, বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সদসদের সাথে কথা বলা বা যোগাযোগ বাড়ান।
  • সহকর্মীদের সাথে দুপুরের লাঞ্চ করুন, সম্ভব হলে মাঝে মাঝে বাইরেও খেতে যেতে পারেন।
  • প্রয়োজন হলে ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা পরিবারের কোন সদস্যের সাথে দেখা করুন, যার সমর্থন বা সাহচর্য আপনার জন্য বিশেষ প্রয়োজন।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল বা কোন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করুন বা যুক্ত থাকার চেস্টা করুন।
  • যদি আপনি দূরে থাকেন সেক্ষেত্রে বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখতে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে স্কাইপ, হোয়াটস আপ, ফেসবুক ইত্যাদির মতো ভিডিও-চ্যাট অ্যাপগুলি কাজে লাগান।

যা করবেন না

  • একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে শুধুমাত্র প্রযুক্তি বা সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভর করবেন না।
  • শুধুমাত্র মানুষকে টেক্সট, মেসেজিং বা ইমেইল করা করা খুব সহজ, কিন্তু সেটা ধরে রাখতে হলে আপনাকে আরো বেশী সরাসরি যোগাযোগ বা দেখা সাক্ষাৎ বাড়াতে হবে।

২. শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন

শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা (physically active) শুধুমাত্র আপনার শারীরিক স্বাস্থ্য এবং ফিটনেসের জন্য জরুরী নয়, এটি আপনার মানসিক সুস্থতারও উন্নতি করতে পারে। এছাড়া এটি আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, আপনার লক্ষ্য বা চ্যালেঞ্জ সেট করে তা অর্জন করতে সহায়তা করে, এবং আপনার মস্তিষ্কে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায় যা ইতিবাচকভাবে আপনার মেজাজ (mood) পরিবর্তন করতে সাহায্য করতে পারে ।

যা করবেন

  • নিজেকে শারীরিকভাবে সক্রিয় বা ফিট রাখতে যা যা করা দরকার তার সবই অনুসরণ করুন।
  • আপনার যদি শারীরিক অক্ষমতা বা দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা থাকে, তাহলে তা কাটিয়ে ওঠার চেস্টা করুন।
  • নিয়ম করে হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো বা নাচ করা ইত্যাদি অন্যতম অর্থাৎ নানা রকম ব্যায়াম শুরু করার অভ্যাস করুন।

যা করবেন না

  • মনে করবেন না যে, আপনাকে একটি জিমে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাতে হবে।
  • আপনি যে কাজগুলো উপভোগ করেন তা ঠিক করে সেগুলোকে আপনার জীবনের একটি অংশ মনে করা সর্বোত্তম৷

৩. নতুন দক্ষতা অর্জন করুন

গবেষণায় দেখা গেছে যে, নতুন কোন কিছুর উপর দক্ষ হওয়া বা নতুন কিছু শেখা নানাভাবে আপনার মানসিক সুস্থতার উন্নতি করতে পারে। এটা একদিকে যেমন আত্মবিশ্বাস বাড়ায় অন্যদিকে আত্মসম্মানও বৃদ্ধি করে। আত্মশুদ্ধি বা সেলফ অব প্রোপরশন তৈরিতে সাহায্য করে, আপনাকে অন্যদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতে সাহায্য করে, এমনকি যদি আপনি মনে করেন যে আপনার কাছে পর্যাপ্ত সময় নেই, বা আপনার নতুন জিনিস শেখার প্রয়োজন নাও হতে পারে তবুও। এক্ষেত্রে যদিও আপনার জীবনে শেখার অনেকগুলি ভিন্ন উপায় রয়েছে।

তবে আপনি নিচের জিনিসগুলো চেষ্টা করে সফল হতে পারেন।

যা করবেন

  • নতুন কোন রান্না শেখার চেষ্টা করুন। স্বাস্থ্যকর খাওয়া এবং রান্নার টিপস সম্পর্কে ইউটিউব এক্ষত্রে খুবই সহায়ক।
  • কর্মক্ষেত্রে একটি নতুন দায়িত্ব নেওয়ার চেষ্টা করুন, যেমনঃ একজন জুনিয়র কলিগ বা সদস্যকে পরামর্শ দেওয়া বা আপনার উপস্থাপনার দক্ষতা উন্নত করা ইত্যাদি।
  • একটি নির্দিষ্ট টাইপের কাজে যুক্ত থাকুন, যেমনঃ ছাদ বাগান করা বা গৃহস্থালির নানা টুকিটাকি কাজ সম্পাদন করা, বই পড়া, কোরআন তিলাওয়াত করা ইত্যাদি।
  • আপনি একটি নতুন ভাষা শেখার চেষ্টা করতে পারেন।
  • নতুন শখের চেষ্টা করুন যা আপনি চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিতে পারেন, যেমনঃ ব্লগ লেখা, কোন নতুন খেলা শুরু করা বা আঁকাআঁকি শেখা ইত্যাদি।

যা করবেন না

  • মনে করবেন না যে, আপনাকে নতুন যোগ্যতা অর্জন করতে বা দক্ষতা শিখতে হবে এইজন্য যে, আপনাকে পরীক্ষা দিতে হবে বা কেউ আপনাকে মূল্যায়ন করবে।
  • যদি কোন জিনিস আপনার মনে আগ্রহ (interest) সৃষ্টি না করে বা আপনি তা উপভোগ (enjoy) না করেন, তাহলে সেটা না করাই উচিৎ।

৪. মানুষের জন্য কিছু করুন

গবেষণা দেখা গেছে যে, জনকল্যাণমূলক কাজ বা দান-খয়রাত এবং দয়ার কাজগুলি আপনার মানসিক সুস্থতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। এতে আপনার নিজের মধ্যে ইতিবাচক অনুভূতি এবং প্রাপ্তি বা পুরস্কারের অনুভূতি তৈরি হয়, যা আপনার উদ্দেশ্য পূরণ করার পাশাপাশি স্ব-মূল্যের অনুভূতি প্রদান করে। আপনাকে অন্য লোকদের সাথে সংযোগ বাড়াতেও সাহায্য করে। এটি হতে পারে আপনার কোন আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা বা আপনার সমাজের বা গ্রুপের কোন কাজের সাথে সক্রিয় থেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করা।

এর মধ্যে আপনি যা করতে পারেন এমন কিছু উদাহরণের মধ্যে রয়েছে:

  • কেউ আপনার জন্য কিছু করেছে তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
  • বন্ধু-বান্ধব, পরিবার বা সহকর্মীদের যথাসম্ভব খোঁজখবর নেওয়া যে, তারা কেমন আছেন এবং সত্যিই তাদের কোন সমস্যা আছে কিনা শোনা।
  • বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়দের সাথে সময় কাটানো যাদের সমর্থন বা সঙ্গ আপনার প্রয়োজন।
  • আপনার পরিচিত কাউকে নানাবিধ কাজে সাহায্য করার পরামর্শ দেওয়া।
  • আপনার এলাকায় স্বেচ্ছাসেবি প্রতিষ্ঠান, যেমন স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম বা কেয়ার হোমের সাথে নিজেকে যুক্ত করা।

৫. বর্তমানকে গুরুত্ব দিন (মননশীলতা)

বর্তমান নিয়ে আরও মনোযোগী হওয়া, যা আপনার মানসিক সুস্থতাকে বহুলাংশে উন্নত করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে আপনার চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি, আপনার শরীর এবং আপনার চারপাশের মনোজগত। কেউ কেউ এই সচেতনতাকে ‘মননশীলতা’ বলে অভিহিত করেন। মননশীলতা আপনার জীবনকে আরও উপভোগ করতে এবং নিজেকে আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে। জীবন সম্পর্কে আপনি যেভাবে অনুভব করেন এবং আপনি যেভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেন এটি ইতিবাচকভাবে তা পরিবর্তন করতে পারে।

স্বাস্থ্য দর্পণ ডেস্কে একঝাক ফার্মাসিস্ট আপনাদের সামনে সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিবেশনে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও ডাক্তার, পুষ্টিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীদের কাছ থেকে নিয়মিত লেখা সংগ্রহ ও তাদের মাধ্যমে রিভিউ করা হচ্ছে। সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে আমরা এসেছি আপনার আস্থা অর্জনের অবিচল মনোবল নিয়ে।

1 Comment

একটি প্রত্যুত্তর করুন

Your email address will not be published.