Food Poisoning Explained in Bangla

ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া – যা জানা জরুরি

548 বার পড়া হয়েছে

ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া খুব সাধারণ একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। এটাকে কখনও কখনও খাদ্যজনিত রোগ বা খাদ্য সংক্রমণও বলা হয়। এর ফলে মানব শরীরে নানাবিধ অসুস্থতা দেখা দেয়, যার চিকিৎসা অনেক ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল হলেও নিরাময়যোগ্য। বিভিন্ন জীবাণু বা বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা দূষিত খাবার খেলে ফুড পয়জনিং (food poisoning) বা খাদ্যে বিষক্রিয়া হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, এটা এমন একটি রোগ যা সংক্রামক বা বিষাক্ত প্রকৃতির, এবং এটা এমন জীবাণুর মাধ্যমে হয়ে থাকে যা খাবার বা পানীয়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পচা, বাসি, অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরিকৃত জীবাণুযুক্ত খাবার ও পানীয় গ্রহণের ফলে ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া দেখা দেয়।

আমাদের দেশে প্রতি বছর আনুমানিক কতজন মানুষ খাদ্যে বিষক্রিয়াজনিত অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং কতজন মানুষ খাদ্যে বিষক্রিয়াজনিত রোগে মারা যায় তার কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবারে বিষক্রিয়া সাধারণত মারাত্মক আকার ধারণ করে না এবং সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তা সেরেও যায়। ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া নানা রকমের হয়ে থাকে। তবে কোন কারণে বিষক্রিয়া হচ্ছে – তার উপর ভিত্তি করে খাদ্যে বিষক্রিয়াকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়।   

ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়ার  লক্ষণ

ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়ার  লক্ষণগুলির মধ্যে প্রায়ই ডায়রিয়া, বমি, পেট খারাপ বা বমি বমি ভাব দেখা যায়। তবে যদি  তীব্র ডায়রিয়া, ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বর, তিন দিনের বেশি ডায়রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হওয়া, পায়খানার সাথে রক্ত বের হওয়া, এত বেশি বমি হওয়া যে শরীর তরল ধরে রাখতে পারেনা, ডিহাইড্রেশন (মুখ এবং গলা শুকিয়ে যাওয়া), দাঁড়ানোর সময় মাথা ঘোরা এবং অনেক সময় ধরে প্রস্রাব না হওয়া ইত্যাদি লক্ষণগুলি তীব্র আকারে দেখা দেয় তাহলে দেরী না করে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।

যেসব খাবারে ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া  হতে পারে  

কিছু খাবার আছে যা খাদ্যজনিত অসুস্থতা এবং খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য বেশী দায়ী। এগুলো ক্ষতিকারক জীবাণু বহন করতে পারে, যা খাদ্য দূষিত হলে আপনাকে খুব দ্রুত অসুস্থ করে তুলতে পারে।  

  • প্রাণীজগতের কাঁচা খাবারগুলি দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, বিশেষ করে কাঁচা বা কম রান্না করা মাংস, হাসের মাংস,  কাঁচা বা হালকাভাবে রান্না করা ডিম, পাস্তুরিত (কাঁচা) দুধ এবং কাঁচা শেল ফিশ এদের মধ্যে অন্যতম।
  • ফল ও সবজিও দূষিত হতে পারে।
  • যদিও নির্দিষ্ট কিছু খাবারের কারণে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, যেকোন খাবার রান্না বা প্রক্রিয়াকরণের সময় বা খাদ্য উৎপাদন শৃঙ্খলের অন্যান্য পর্যায়ে রান্নাঘরে কাঁচা মাংসের সাথে ক্রস কন্টামিনেশন (দূষণ) সহ দূষিত হতে পারে।
  • অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দীর্ঘসময় খোলা রেখে দেওয়া যেকোনো খাবারও ক্ষতির কারণ হতে পারে।

ফুড পয়জনিং প্রতিরোধে কার্যকর উপায়

নিচের ছয়টি কার্যকর উপায়ে ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব   

  1. খাবার প্রস্তুত করার আগে, প্রস্তুতকালীন সময় এবং পরে আপনার হাত এবং কাজে ব্যবহৃত পাত্রগুলো ধুয়ে ফেলুন। জীবাণু আপনার হাত, বাসনপত্র, কাটিং বোর্ড এবং কাউন্টারটপ সহ আপনার রান্নাঘরের আশেপাশে অনেক জায়গায় বেঁচে থাকতে পারে।
  2. কাঁচা মাংস, মুরগি, সামুদ্রিক খাবার এবং কাঁচা ডিম ইত্যাদি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা খাবার থেকে আলাদা রাখুন।
  3. পৃথক কাটিং বোর্ড ব্যবহার করুন এবং আপনার শপিং কার্ট এবং রেফ্রিজারেটরের অন্যান্য খাবার থেকে কাঁচা মাছ-মাংস দূরে রাখুন।   
  4. ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া মারার জন্য সঠিক অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রায় খাবার রান্না করুন। এক্ষেত্রে একটি খাদ্য থার্মোমিটার ব্যবহার করতে পারেন।
  5. আপনার রেফ্রিজারেটর ৪০° ফারেনহাইট বা তার নিচে রাখুন। রান্নার ২ ঘন্টার মধ্যে অবশিষ্টাংশ ফ্রিজে রাখুন।
  6. খাদ্য উপাদান গুলো পরিচ্ছন্ন জায়গায় ঢেকে সংরক্ষণ করুন। 

ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়ার  উচ্চ ঝুঁকিতে কারা বেশী থাকে

যে কেউ ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে কিছু শ্রেনী বা গোষ্ঠীর লোকদের এতে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। জীবাণু এবং অসুস্থতার সাথে লড়াই করার তাদের ক্ষমতা ততটা কার্যকর নাও হতে পারে। এই গ্রুপে যারা অন্তর্ভুক্ত তারা হলেন- যাদের বয়স ৬০ বা তার বেশী, ৫ বছরের কম বয়সী শিশু, ডায়াবেটিস, লিভার ও কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি, এইচআইভি/এইডস ও ক্যান্সার সহ যাদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং সর্বোপরি গর্ভবতী মায়েরা সালমোনেলা (Salmonella), ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর (Campylobacter), লিস্টেরিয়া (Listeria) এবং ই-কোলাই (E. coli)-এর মতো জীবাণু থেকে এই গোষ্ঠীগুলির অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।     

ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা পেতে করণীয়

যাদের খাবারে ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাদের কম রান্না করা প্রানিজ খাদ্য বা কাঁচা খাবার (যেমন গরু বা খাসির মাংস, মুরগির মাংস, টার্কি, ডিম বা সামুদ্রিক খাবার ইত্যাদি), কাঁচা বা হালকা রান্না করা স্প্রাউট, পাস্তুরিত (কাঁচা) দুধ এবং জুস, নরম পনির বা দুগ্ধ বা পনির জাতীয় খাদ্য ইত্যাদি খাওয়া উচিত নয়। এছাড়া আক্রান্ত হলে তেল মসলা ছাড়া খাবার, রুটি, আপেল, ভাত ইত্যাদি ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া থেকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করবে। ডিহাইড্রেশন হলে বিলম্ব না করে ওরাল স্যালাইন খেতে হবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধও খেতে হবে।

স্বাস্থ্য দর্পণ ডেস্কে একঝাক ফার্মাসিস্ট আপনাদের সামনে সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিবেশনে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও ডাক্তার, পুষ্টিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীদের কাছ থেকে নিয়মিত লেখা সংগ্রহ ও তাদের মাধ্যমে রিভিউ করা হচ্ছে। সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে আমরা এসেছি আপনার আস্থা অর্জনের অবিচল মনোবল নিয়ে।

1 Comment

একটি প্রত্যুত্তর করুন

Your email address will not be published.