সর্দি-কাশি (cold) বা সাধারণ ফ্লুতে (flu) আক্রান্ত বেশিরভাগ লোকেরই হালকা অসুস্থতা থাকে এবং তাদেরকে নিয়মিত শরীরের পরিচর্যা ও যত্ন নিতে হবে। যদিও এক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগস (antiviral drugs) বা ওষুধের খুব একটা প্রয়োজন হয় না, তবুও প্রয়োজনে সঠিক ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে হবে। আপনি যদি ফ্লুর উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনাকে বাড়িতে থেকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া উচিত এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য, বন্ধু-বান্ধব বা বাহিরের কারো সংস্পর্শ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
যাইহোক, আপনার যদি ফ্লুর লক্ষণ থাকে এবং আপনি উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীতে (যেমনঃ উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস বা এ জাতীয় অন্যান্য রোগে আক্রান্ত) থাকেন বা আপনার অসুস্থতা নিয়ে আপনি খুব উদ্বিগ্ন বা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হন, তাহলে অতিদ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।
অল্পবয়সী শিশু, ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তি, গর্ভবতী মা এবং নির্দিষ্ট অসুখের কিছু রোগীরা সাধারণত ফ্লু-সম্পর্কিত গুরুতর জটিলতার ঝুঁকিতে বেশি থাকে। আপনি যদি উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীতে থাকেন এবং ফ্লুর লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়, তবে আপনার অসুস্থতার শুরুতেই আপনাকে একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা ভাল। ফ্লুর জন্য আপনার উচ্চ-ঝুঁকির অবস্থা সম্পর্কে তাকে বিস্তারিত জানান। এক্ষেত্রে ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত, কারণ অসুস্থতা শুরু হওয়ার ২/৩ দিনের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা হলে সবচেয়ে কার্যকরী ফল পাওয়া যায়।
জরুরী সতর্কতা লক্ষণসমূহ কি কি?
শিশুদের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত শ্বাস নেওয়া বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, ঠোঁট বা মুখ নীলাভ হওয়া, নিঃশ্বাসের সাথে পাঁজর টানা, বুকে প্রচন্ড ব্যাথা, মাংশপেশীতে গুরুতর ব্যথা (শিশুর হাঁটতে অক্ষমতা), ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা (৮ ঘন্টা ধরে প্রস্রাব না হওয়া, গলা বা মুখ শুকিয়ে যাওয়া, কান্নার সময় অশ্রু বের না হওয়া ইত্যাদি), জেগে থাকার সময় সাড়া শব্দ না করা, খিঁচুনি, ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট এর উপরে জ্বর, ১২ সপ্তাহের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে যে কোনো প্রকার জ্বর বা কাশি, সেরে সেরে জ্বর আসা, দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসায় অবস্থার অবনতি হওয়া ইত্যাদি।
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট বা ঘন ঘন শ্বাস নেয়া, বুকে বা পেটে অবিরাম ব্যথা বা চাপ বোধ করা, ক্রমাগত মাথা ঘোরা, কনফিউশন বা বিভ্রান্তি, জাগাতে অক্ষমতা, খিঁচুনি, দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্রাব না হওয়া , তীব্র পেশী ব্যথা, অসহনীয় দুর্বলতা বা অস্থিরতা, সেরে সেরে জ্বর বা কাশি হওয়া, দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসায় অবস্থার অবনতি হওয়া ইত্যাদি।
চিকিৎসার জন্য কি ওষুধ আছে?
হ্যাঁ, আপনার ডাক্তার ফ্লু চিকিৎসার জন্য প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিভাইরাল বা তার নিজস্ব ভাবনা অনুযায়ী ওষুধ দিতে পারেন। এই ওষুধগুলি আপনাকে দ্রুত আরও ভাল করতে পারে এবং গুরুতর জটিলতাগুলিও প্রতিরোধ করতে পারে।
আপনাকে কতক্ষণ বাড়িতে থাকতে হবে?
সাধারনত বলা হয়ে থাকে যে, আপনি চিকিৎসা সেবা বা অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা ছাড়া আপনার জ্বর সেরে যাওয়ার পরও কমপক্ষে ১/২ দিন বাসায় থাকুন। প্যারাসিটামল এর মতো জ্বর কমানোর ওষুধ ব্যবহার না করেই আপনার জ্বর চলে যাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আপনার কর্মস্থল যেমনঃ অফিস, স্কুল, ভ্রমণ, কেনাকাটা, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং যেকোন ধরনের জনসমাবেশ পরিহার করে বাড়িতে থাকা উচিত।
এছাড়াও শিশু এবং কিশোরদের (১৮ বছর বা তার কম বয়সী যে কেউ) মধ্যে যাদের ফ্লু আছে বা ফ্লু আছে বলে সন্দেহ করা হয় তাদেরকে অ্যাসপিরিন (এসিটাইল স্যালিসাইলিক অ্যাসিড) বা স্যালিসাইলেটযুক্ত বস্তু (যেমন পেপ্টো বিসমোল) দেওয়া উচিত নয়। এটি রেইস সিনড্রোম (Reye’s syndrome) নামে একটি বিরল ও অত্যন্ত গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
অসুস্থ থাকাকালীন সময়ে কী করা উচিত?
অন্যদের থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন যাতে তারা সংক্রমিত না হতে পারে। যদি আপনাকে বাড়ি থেকে বের হতেই হয় (উদাহরণস্বরূপ চিকিৎসা সেবা পেতে) তাহলে অবশ্যই একটি ফেস মাস্ক ব্যাবহার করুন। কাশি এবং হাঁচি দেয়ার সময় রুমাল বা টিস্যু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন। অন্যদের মধ্যে ফ্লু ছড়ানো থেকে রক্ষা পেতে প্রায়ই সাবান দিয়ে আপনার হাত ধুয়ে নিন অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে বার বার হাত মুছে নিন। *জলবায়ুগত পরিবর্তন এবং ব্যক্তিবিশেষ ব্যতিরেকে এই রোগের প্রকোপ কমবেশি হতে পারে।